বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল এর জীবনী রচনা
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের গৌরবোজ্জল ইতিহাসে যে সকল বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম সোনার অক্ষরে লিখিত রয়েছে তাদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল ছিলেন অন্যতম । যারা "বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল এর জীবনী রচনা" সম্পর্কে আগ্রহী এই পোষ্টটি তাদের জনয়য়।
চলুন যেনে নেওয়া যাক বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল এর জীবনী রচনা সম্পর্কে।
ভূমিকা
পৃথিবীতে অসংখ্যা মহান ব্যক্তিত্ব সম্পূর্ণ মানুষ রয়েছে। ইতিহাস সেই মানুষ গুলোর কথা মনে রাখে এবং ইতিহাসই কথা বলে। ইতিহাস যেমন কথা বলে তাই ইতিহাসের পাতায় শেখ কামালের বীরত্বর কথা তুলে ধরতে হবে। তার সাহসী জীবন যাত্রার ন্যায্য সম্মান প্রদান করতে হবে। বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ কামাল অদ্বিতীয় এবং অতুলনীয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল এর চরিত্র এমনই উজ্জল যে তা সবাইকে অভিভূত করবে, সাহস যোগাবে ও আলোর পথে আসার জন্য পথ দেখাবে। শেখ কামাল ছিলেন একজন ভিন্ন এক চরিত্রের অধিকারী ও বৈশিষ্ট্যে মানুষ। তিনিতার স্বল্প বয়সের জীবনেই যে কর্ম করে গেছেন তা তাকে অন্য এক উচ্চতায় পৌছে দিয়েছেন।সত্য সব সময়ই সত্য। সত্য কখনই মিথ্যা হয় না। সত্য, সুন্দর, সাহস ভদ্রতার ব্যাকরণ হচ্ছে শেখ কামাল।
শেখ কামাল পথ প্রদর্শক
সারাবিশ্বে অনেক পথ প্রদর্শক রয়েছেন। যারা অল্প আয়ুতেই কর্মজীবনে শ্রেষ্ঠ কৃতী মানব হয়েছেন। তাদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল একজন। পৃথিবাতে শ্রেষ্ঠতম কীর্তিমানদেরও অনেকে এমন বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী ছিলেননা যা আমাদের শেখ কামালের অল্প আয়ুর জীবনে আমরা দেখতে পাই।
বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, প্রতিটি ক্ষেত্রেই তার অবদান বা ভূমিকা ছিল অতুলনীয়।সংগীত থেকে শুরু করে ক্রীড়া, রাজনীতি, নাটক, অভিনয়, উপস্থিত বক্তৃতা, মুক্তিযোদ্ধাসহ সেনাবাহিনীর নানা ক্ষেত্রে শেখ কামাল যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছেন। যা পুরো বিশ্বের ইতিহাসে একটি বিরল প্রতিভা। বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল এর জীবনী, বর্তমান প্রজন্মের কাছে পথ প্রদর্শক হিসেবে কাজ করে।
শেখ কামালের শৈশব
জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান এর জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামাল ১৯৪৯ সালে ৫ই আগস্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গী পাড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন। শেখ কামাল হলো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দ্বিতীয় সন্তান। যখন শেখ কামালের বয়স দুইমাস দশ দিন তখন ১৯৪৯ সালের ১৪ই অক্টোবর মাসে গ্রেফতার হন, শেখ মুজিবুর রহমান।
তারপর শেখ মুজিবুর রহমান যখন ১৯৫২ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি মুক্তি পান, তখন শেখ কামাল অল্প অল্প কথা বলতে শিখেছে। তবে অনেক দিন না দেখায় বাবাকে ঠিক ভাবে চিনতেও পারেনা। হঠাৎ এক সময় বড় বোন শেখ হাসিনাকে জিজ্ঞেস করে, ‘হাসুআপা তোমার আব্বাকে আমি একটু আব্বা বলে ডাকি’।
শেখ কামালের শৈশবের ৫/৬টি বছর বাইগার নদীরতীর ঘেঁষে তাল-তমাল গাছের সবুজ সমারোহ ছবির মতো একটি গ্রাম যার নাম টুঙ্গি পাড়ায় কেটে যায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভের পর শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের নেতৃত্বে মন্ত্রিসভা গঠিত হলে শেখ মুজিবুর রহমান মন্ত্রীত্ব লাভ করেন। তারপর স্বপরিবার নিয়ে শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় বসবাস শুরু করেন।
শেখ কামালের বিয়ে
শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠপুত্র শেখ কামাল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর অন্যতম সংগঠক ছিলেন। শেখ কামাল বাংলাদেশের একজন সুনামধন্য ক্রিড়াবিদ ছিলেন। স্বাধীনতার আগে এবং পরে তিনি হার্ডলস, উচ্চলাভ ও বিস্তৃত লাফ এই তিন ক্ষেত্রেই যথেষ্ট কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছিলেন। তিনি মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানীর এইড ডিক্যাম্প (এডিসি) হিসেবে কাজ করতেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৫ সালে প্রথম ফরিদপুরে কোনো এক পার্লামেন্ট সদস্যকে দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব পাঠান সুলতানার বাবা দবির উদ্দিনের কাছে। পরে প্রস্তাবে রাজি হয়ে দুই পরিবারের সম্মতিতে শেখ কামাল ও সুলতানার বিয়ে সম্পন্ন হয় ১৯৭৫ সালের ১৪ জুলাই মাসে। সুলতানা আহমেদ তিনিও একজন ক্রীড়াবিদ ছিলেন।
পরে শেখ কামালের সাথে বিয়ে হওয়ার পর সুলতানা কামাল নামে পরিচিত লাভ করেন।
শেখ কামালের শিক্ষা জীবন
১৯৫৬ সালে শেখ কামাল ১১২-সেগুন বাগিচায় অবস্থিত ডন্স কিন্ডার গোর্ডেন স্কুলে কেজি-১ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। কেজি-১ থেকে কেজি-৩ এবং স্ট্যান্ডার্ড-১ থেকে স্ট্যান্ডার্ড-৩ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনো করার পর ডাবল প্রমোশন নিয়ে ১৯৬১ সালে বিএএফ শাহীণ স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি হন। শাহীন স্কুলের তিতুমীর হাউজ এর ক্যাপ্টেন নির্বাচিত হয়েছিলেন ছাত্র জীবনে।
শেখ কামালের উদার নৈতিক, মানবিক ও শিষ্টচার গুণাবলীর কারনে হাউজের প্রায় সকলেই তাকে সমর্থন করতেন। শেখ মুজিবুর রহমান জেলের বাইরে থাকলে তিনিই শেখ কামালকে স্কুলে রেখে আসতেন। অনেক সময় শেখ কামাল নিজেই স্কুটারে কওে নিজেই স্কুলে যেতেন। শেখ কামাল ১৯৬৭ সালে এস.এস.সি. পাশ করেন।
তারপর ঢাকা কলেজে ভর্তি হয়ে ১৯৬৯ সালে ঢাকা কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পরীক্ষায় পাশ করেন।পরে ১৯৬৯ সালে শেখ কামাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। যখন মুক্তিযোদ্ধ শুরু হয় তখন তিনি স্নাতক এর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। পরবর্তীতে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে অসুস্থ থাকা অবস্থাতে পরীক্ষা দিয়ে তিনি দ্বিতীয় শ্রেণিতে পঞ্চম স্থান অধিকার করেন।
শেখ কামাল বিশ্ববিদ্যালয় এর জীবনে প্রত্যেকটি ক্লাস এ অংশ গ্রহণ করতেন এমনকি টিউটোরিয়াল ক্লাসেও অংশ গ্রহণ করতেন। শেখ কামালের হাতের লেখাও ছিল চমৎকার। ১৯৭৫ সালে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন এবং ১৪ই আগস্ট কোর্স সমাপনী মৌখিক পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেন।
পরবর্তীতে শাহাদতবরণের পর ১৯৭৬ সালে ২৯শে জানুয়ারি স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ফলাফল বের হয়েছিল। এই পরীক্ষায় তিনি দ্বিতীয় শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।
শেখ কামাল খেলোয়ার ও ক্রীড়া সংগঠক
শেখ কামাল পড়াশুনায় যেমন অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন তেমনি তিনি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রীড়া সংগঠকও ছিলেন। খেলাধূলায় রয়েছে তার সবচেয়ে বেশি অবদান। তিনি সর্বপ্রথম টুঙ্গীপাড়া থেকে যখন ঢাকায় আসে তখণ তিনি শৈশবে সেগুন বাগিচা নর্থ-সাউথ রোড ও বিজয় নগরের মাঝের মাঠটিতে খেলাধূলা করতেন।
তিনি মোটামুটি ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৮ সাল এর দিকে মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়ায় একটি মাঠে খেলাধুলা করতেন। তবে সেই সময় অত্র এলাকায় শিশু ও তরুণদের জন্য খেলার কোন ক্লাব ছিলনা। ক্লাব প্রতিষ্ঠার জন্য তিনিই সর্ব প্রথম উদ্যোগী হন। সর্বপ্রথম তিনি আবাহনী সমাজ-কল্যাণ সংস্থা গড়ে তোলেন পরে মুক্তিযুদ্ধ থেকে ফিরে এসে ১৯৭২ সালে আবাহানী ক্রীড়াচক্র প্রতিষ্ঠা করেন।
তিনি তরুণ সমাজকে অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করেন। ১৯৭২ সালে তিনি জার্মানির মিউনিখে ‘সামার অলিম্পিক’ দেখতে যান। ১০ম বিশ্ব যুব সম্মেলনে যোগদানের জন্য ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ৭৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নিয়ে জার্মানির বার্লিনে যায়। শুধু ফুটবল নয় এর পাশাপাশি তিনি আবাহনী ক্রীড়া চক্রের অধীনে তিনি হকি, ক্রিকেট এবং টেবিল টেনিস দলও গঠন করেন।
আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় বাস্কেটবল প্রতিযোগিতায় তার দল চ্যাম্পিয়ান হয়েছিল। খেলোয়ারদেরকে নতুন নতুন পোশাক ও ক্রীড়া সামগ্রী সরবরাহ করাই তার নেশায় পরিণত হয়। তিনি খেলাধুলায় উন্নত প্রশিক্ষনের জন্য স্বাধীন দেশে প্রথম বিদেশী কোচ ব্রিটিশ নাগরিকমি. বিলহার্টকে নিয়োগ করেন।
পরবর্তীতে তার নানা প্রকার গৃহীত নানা উদ্যোগের ফলে এই ক্লাবের খ্যাতি সারা দেশ ব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। পওে তিনি আবাহী ক্রীড়াচক্রের জেলাশাখা প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণকরেন। শেখ কামাল খেলাধুলার বিষয়ে বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসেন।
এমনকি তিনি তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকার অনুদান নিয়ে ‘খেলোয়ার কল্যাণ তহবিল’ গঠন করেন।
শেখ কামালের জীবন যাপন
শেখ কামালের জীবন যাপন ছিল আট দশটা সাধারণ মানুষের মতো। শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে তাদের ব্যবহার করার জন্য টয়োটা-৬৮ মডেলের একটি লাল গাড়ি ছিল যা ছিল শেখ কামালের সৌখিন সম্পত্তি। শেখ কামালের কোন প্রকার অর্থ-বিত্ত ও ব্যবসা বানিজ্যের প্রতি কোন আকর্ষণ ছিলনা।
শেখ কামাল কখনও ইন করে শার্ট পড়ে ক্যম্পাসে আসতে দেখা যেতো না। তিনি সাধারণত ওপেন ফুলহাতা টি-শার্ট এবং প্যান্ট পড়তেন, আর পায়ে পড়তেন সাধারণ স্যান্ডেল বা স্যান্ডেল স্যু। কখনও তাকে স্যুট পরতে দেখা যায়নি।। তিনি যখন ছাত্রলীগ করতেন তখনও কোনদিন নেতৃত্বের আসনে বসেননি। তিনি ছিলেন অনেক স্মার্ট, বিনয়ী ও আদব কায়দায় পরিপূর্ণ।
তিনি নিজের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের পরিবর্তে সব সময় দেশ ও জাতির স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত থাকতেন। ১৯৭৫ সালে ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু সহ স্বপরিবারে হত্যার পর সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন তখনকার চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য জনাব আবুল ফজল যে সময় এক অনুষ্ঠানে শেখ কামালের প্রশংসায় বলেছিলেন যে, শেখ কামাল একজন আদর্শবান মানুষ।
তার বিন্দু মাত্র অহংকার ছিলনা। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী ও নম্র সভাবের।
শেখ কামালের ব্যাংক ডাকাতি
প্রধানমন্ত্রীর ছেলেকে টাকার মালিক হওয়ার জন্যতো আর ব্যাংক ডাকাতির প্রয়োজন নাই। দু নম্বর অনেক রাস্তায় অনেক টাকার মালিক হওয়া যায়। আসলে ইতিহাসের সব কুখ্যাত চক্রান্তকারীর ছলনাময় চক্রান্তের কারনেই তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক ডাকাতির অপবাদ প্রচার করা হয়েছিল।
যা এখনো ক্ষেত্রবিশেষে বার বার বঙ্গবন্ধুর পরিবারের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়। আসলে সেইদিন কি হয়েছিল তা প্রত্যক্ষদর্শী সেই বিএনপি নেতা বিএনপির মন্ত্রী টুকু তার বর্ণনায় জীবন্ত হয়ে উঠেছিল ঘটনাটি।
কয়েক জন বন্ধুকে নিয়ে শেখ কামাল রাত তখন আনুমানিক ৯টা কি সাড়ে ৯টার দিকে সেই দিন আড্ডা দিচ্ছিল। বর্তমানে বেস্মিকো গ্রুপের অন্যতম কর্ণধার সালমান এফ রহমান যিনি ছিলেন শেখ কামালের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বন্ধু ফোন করলেন হঠাৎ করেই। জানালেন নতুন একটি ভঙ ওয়াগন কোম্পানির মাইক্রোবাস কিনেছেন।
শেখ কামাল এই খবর শুনে খুশিতে লাফ দিয়ে উঠলেন এবং সালমান রহমানকে অনুরোধ করলেন যে গাড়িটি একটু পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য। শেখ কামালের উদ্দেশ্য ছিল নতুন গাড়িটি নিয়ে ঢাকা শহরটি একটি চক্কর দিবে। অনুরোধের কারনে সালমান এফ রহমান গাড়িটি পাঠিয়ে দিল।
আনুমানিক ১০টার দিকে গাড়িটা আসলো। তখন উপস্থিত বন্ধুরা প্রস্তাব করলো যে পুরান ঢাকার চিনুর বিরিয়ারিন দোকানে গিয়ে বিরিয়ানি খাওয়ার জন্য। যেই কথা সেই কাজ, শেখ কামাল আরও দুই তিনজন বন্ধুকে ফোন করলো এবং ফোন করলেন বিএনপির মন্ত্রী টুকুকেও।
প্রথমে তিনি অস্বীকার করলেন পরে নতুন ভঙ ওয়াগন গাড়িতে চড়া এবং চিনুর বিরিয়ারিন লোভ সামলাতে পারলোনা। বললেন যে যাওয়ার সময় এফিফ্যান্ট রোডে তার বাসার সামনে থেকে তাকে উঠিয়ে নিয়ে যেতে। রাত সাড়ে ১০টায় এলিফ্যান্ট রোড থেকে তাকে তুলে শেখ কামাল রওনা দিলেন।
এই ভাবেই কাকরাইল মোড় পর্যন্ত এগোলেন। ঝামেলা বাধল মোড় পার হওয়ার পরই। এই ঝামেলা নিয়ে কিছু বলার আগে তৎকালীন রাজনীতি নিয়ে সংক্ষিপ্ত না বললেই না। বঙ্গবন্ধু সরকারকে বিনাশ করার জন্য যেসব দেশি-বিদেশি প্রতিপক্ষ দল কাজ করছিল তাদের মদ্যে মরহুম সিরাজ সিকদারের সর্বহারা পার্টি বা নকশালেরা ছিল অন্যতম।
এরা সাধারণথ আন্ডার ওয়াল্ড থেকে অপতৎপরতা চালাত। যত ধরনের খারাপ কাজ তারা চালাত। অন্যদিকে জাসদ নামক রাজনৈতিক দলটির তৎপরতা ছিল আরও ভয়াবহ। তারা রাজনীতি করত জাসদের নামে আর সন্ত্রাসী চালালত গণবাহিনীর নামে।
গণবাহিনী এবং নকশালদের দমন করার জন্য এসপি মাহবুরের টিমগুলোর আবার পরিচিতি হতো টিম লিডারের নামানুসারে যার ভিতরে একটি টিমের নাম ছিল ‘কিবরিয়া বাহিনী’। সেদিন যেই রাতের কথা বলছিলাম সেই রাতে কাকরাইল পল্টন এলাকায় টহলের দায়িত্বে ছিল সেই কিবরিয়া বাহিনী। তারা সাধারণত সাদা পোশাকে সশস্ত্র অবস্থায় প্রাইভেট গাড়িতে ঘুরত।
কারন হলো গনবাহিনী বা নকশালীদের ধরার জন্য। আর কাউকে সন্দেহ হলেই চ্যালেঞ্জ করত এবং অনেক সময় গুলিও চালাত। যাইহোক তাদের দুই পক্ষের ভুল বোঝাবুঝির কারনে পুলিশ গাড়ি থেকে নেমে এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে লাগলেন মাইক্রোবাসে বসা শেখ কামাল ও তার বন্ধুদের ওপর। সবাই মারাত্নক ভাবে জঘম হলো কেবল বিএনপির নেতা টুকু ছাড়া।
পরে যখন পুলিশ বাহিনী বুঝতে পারলো তখন আহতদের সাথে সাথে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো। বঙ্গবন্ধু তখনও জানে না ঘটনা সম্পর্কে। পরে রাত আনুমানিক ৩ টার দিকে টুকু ধানমন্ডি বত্রিশ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর ভবনে এসে শেখ জামালকে খবরটি দিয়েই আবার ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে চলে যায়।
শেখ কামালকে ‘ব্যাংক ডাকাতি’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার একটা চেষ্টা চলছিল দীর্ঘদিন ধরেই। মোটামুটি ১৯৭৪ সাল থেকে এই প্রচারণা শুরু হয়। এখনও অনেক পাঠক বিশ্বাস করে যে দলবল নিয়ে ব্যাংক ডাকাতি করতে গিয়ে শেখ কামাল গুলিবিদ্ধ হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার ছেলের অবাঞ্ছিত ঘোরাফেরায় খুব ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন।
প্রথমে শেখ কামালকে হাসপাতালে দেখতে যেতে অস্বীকৃতি করে। পরে ১৬ ডিসেম্বর বিকেলে বঙ্গবন্ধু তার সন্তান শেখ কামালকে দেখতে যান। এই দিকে স্বাধীনতাবিরোধী ও আওয়ামী লীগ বিরোধী এই ঘটনাকে ভিন্নভাবে প্রচার করে। শেখ কামাল ব্যাংক ডাকাতি করতে গিয়ে পুলিশের হাতে গুলিবিন্ধ হয়েছে এই বলে তারা প্রচারনা চালায় এবং দেশ বিদেশে এই ভুল তথ্য ছড়াতে থাকে।
উপসংহার
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, শেখ কামাল ছিলেন ছোট বেলা থেকেই নম্র, ভদ্র ও সাহসী। সে ক্রীড়াঙ্গনকে খুব ভালবাসতেন। সাধারণ জীবন যাপন করতে বেশি পছন্দ করতেন। উপরোক্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল এর জীবনী রচনা- সম্পর্কিত পোষ্ট সম্পর্কে কোন মন্তব্য থাকলে নিচের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন।
ধন্যবাদ
সামরিন ইনফো।
সামরিন ইনফো এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url