বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাঠানোর নিয়ম

বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে বিদেশে টাকা পাঠানোর বেশ কিছু নিয়মকানুন রয়েছে যা বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান দ্বারা নির্ধারিত। সঠিক নিয়ম মেনে বৈদেশিক লেনদেন করলে আর্থিক ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। এই পোস্টে আলোচনা করা হয়েছে মূলত বাংলাদেশ থেকে বৈধ উপায়ে বিদেশে টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়া ও প্রয়োজনীয় নিয়মকানুন সম্পর্কে।
বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাঠানোর নিয়ম
চলুন যেনে নেওয়া যাক "বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাঠানোর নিয়ম" সম্পর্কে বিস্তারিত। 

ভূমিকা

বিশ্বায়নের এই যুগে, পরিবার, শিক্ষা, চিকিৎসা বা ব্যবসায়িক প্রয়োজনে বিদেশে টাকা পাঠানোর প্রয়োজন প্রায়শই ঘটে। তবে এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে টাকা পাঠানোর জন্য নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়। 

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশিকা এবং অন্যান্য আর্থিক সংস্থার সঠিক অনুমোদন থাকা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়ায় কোন আইনগত সমস্যা না হয়।

বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাঠানো কি আইনগত?

সাধারণত বিদেশ থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠানো সহজ হলেও বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাঠাতে বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার জন্য কঠোর নিয়ম আরোপ করেছে। 

বিদেশে টাকা পাঠানোর সময় দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করা হয়, তাই কেবল নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্ষেত্রে টাকা পাঠানো বৈধ। অনুগ্রহ করে এই নিয়মগুলো মেনে চলুন, না হলে টাকা পাচারের অপরাধে জেল বা জরিমানা হতে পারে।

বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাঠানোর নিয়ম

বাংলাদেশ থেকে মূলত ব্যাংকের মাধ্যমে এবং নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্যাটাগরিতে টাকা পাঠানো যায়। চলুন দেখে নেই কী কী মাধ্যমে এবং কোন ক্যাটাগরিতে বিদেশে টাকা পাঠানো যায়:
বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাঠানোর নিয়ম

১. ব্যাংকের মাধ্যমে

  • ভ্রমণ: বছরে সর্বোচ্চ ৫,০০০ ডলার (সার্ক দেশগুলোতে) এবং ৭,০০০ ডলার (অন্য দেশে) পাঠানো যায়।
  • চিকিৎসা: সর্বোচ্চ ১০,০০০ ডলার।
  • পড়াশোনার ফি: বিদেশী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চিঠি, টিউশন ফি বিবরণ, এবং ভিসা সহ স্টুডেন্ট প্রোফাইল তৈরি করে টাকা পাঠানো যায়।
  • ব্যবসা: ব্যবসার জন্য কোন অতিরিক্ত অনুমতির প্রয়োজন নেই। বৈদেশিক মুদ্রা আনার লক্ষ্যে এই সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

২. ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন

  • ক্যাটাগরি: বিদেশে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী, চিকিৎসার জন্য বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তি এবং পরিবারের সদস্য।
  • প্রক্রিয়া: ব্যাংকে প্রোফাইল খুলে ডকুমেন্টস দিয়ে যাচাই করাতে হবে।

৩. পেওনিয়ার (Payoneer)

  • অনলাইন পেমেন্ট: পেওনিয়ারের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সাররা সহজেই টাকা পাঠাতে পারেন।
  • সীমাবদ্ধতা: মাসে সর্বোচ্চ ৫০,০০০ ডলার এবং সর্বনিম্ন ৫০ ডলার।

ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাঠানোর নিয়ম

বিদেশে ভ্রমণের সময় ব্যয় নির্বিঘ্নে মেটানোর জন্য বৈধ উপায়ে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাঠানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত নীতিমালা মেনে ভ্রমণের জন্য বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ বা পাঠানো যেতে পারে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, এই প্রক্রিয়ার বিস্তারিত নিয়ম-কানুন।
বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাঠানোর নিয়ম

১. বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা

বিদেশ ভ্রমণের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা। ব্যাংকে ডলার বা অন্য বৈদেশিক মুদ্রা এন্ডোর্স করার জন্য এটি অত্যন্ত জরুরি।

২. ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা এবং কার্ড সংগ্রহ

বিদেশে ভ্রমণের জন্য ব্যাংকের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা এন্ডোর্স করতে হবে। এর জন্য আপনাকে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে এবং সেই ব্যাংক থেকে ডেবিট অথবা ক্রেডিট কার্ড সংগ্রহ করতে হবে।

৩. ডলার এন্ডোর্সমেন্ট

বিদেশ ভ্রমণের জন্য আপনি ব্যাংক থেকে আপনার পাসপোর্টে নির্দিষ্ট পরিমাণ ডলার এন্ডোর্স করাতে পারবেন। সাধারণত সার্কভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণের জন্য বছরে সর্বোচ্চ $৫,০০০ এবং সার্কভুক্ত দেশগুলোর বাইরে ভ্রমণের জন্য সর্বোচ্চ $৭,০০০ ডলার এন্ডোর্স করা যায়। এই এন্ডোর্সমেন্ট ব্যাংকিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।

এন্ডোর্সমেন্ট করার ধাপ:

  • ধাপ ১: পাসপোর্ট নিয়ে নিকটস্থ ব্যাংক শাখায় যান।
  • ধাপ ২: নির্দিষ্ট আবেদন ফর্ম পূরণ করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিন।
  • ধাপ ৩: ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আপনার পাসপোর্টে ডলার এন্ডোর্সমেন্ট করে দেবে।

৪. ট্রাভেলার্স চেক ও প্রিপেইড কার্ড

বৈদেশিক মুদ্রা এন্ডোর্সমেন্টের পাশাপাশি ট্রাভেলার্স চেক এবং প্রিপেইড কার্ড সংগ্রহ করা যেতে পারে। ট্রাভেলার্স চেক বা প্রিপেইড কার্ডের মাধ্যমে বিদেশে খরচ নির্বিঘ্নে চালানো সম্ভব।

প্রিপেইড কার্ড সংগ্রহের প্রক্রিয়া:

  • ব্যাংকে গিয়ে আবেদন করুন।
  • প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এবং বৈধ পাসপোর্ট জমা দিন।
  • ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রিপেইড কার্ড সংগ্রহ করুন এবং এর মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ জমা দিন।

৫. ডলার বা বৈদেশিক মুদ্রা কেনার নিয়ম

ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বিদেশে যাওয়ার আগে নির্দিষ্ট ব্যাংক বা বৈধ মানি এক্সচেঞ্জ থেকে ডলার বা বৈদেশিক মুদ্রা কেনা যেতে পারে।

কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস

  • বৈধভাবে বিদেশে ভ্রমণের টাকা এন্ডোর্সমেন্টের জন্য সবসময় নিজস্ব ব্যাংক ব্যবহার করুন।
  • যে পরিমাণ ডলার বা বৈদেশিক মুদ্রা এন্ডোর্স করবেন, তা পাসপোর্টে উল্লেখ থাকবে।
  • যে দেশে ভ্রমণ করছেন, সেই দেশের আইন মেনে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবহার করুন।
ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়া সহজ। পাসপোর্টে বৈধ এন্ডোর্সমেন্ট, ব্যাংকের মাধ্যমে ডেবিট/ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে টাকা স্থানান্তরসহ বিভিন্ন উপায়ে আপনি ভ্রমণের জন্য প্রয়োজনীয় মুদ্রা নিয়ে যেতে পারেন। তবে সবসময় আইন মেনে ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা পাঠান, যেন কোনো সমস্যায় পড়তে না হয়।

চিকিৎসা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাঠানোর নিয়ম: বিস্তারিত শর্তসমূহ ও বর্ণনা

বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে বিদেশে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়ম-কানুন এবং শর্তাবলী রয়েছে। দেশের অর্থনীতি সুরক্ষিত রাখতে এবং বিদেশে মুদ্রা পাচার রোধ করতে সরকার এই নিয়মগুলো নির্ধারণ করেছে। এই নিয়মগুলোর অধীনে বিদেশে চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করা যায়। এখন আমরা চিকিৎসার জন্য বিদেশে টাকা পাঠানোর ধাপ এবং শর্তগুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাঠানোর নিয়ম

চিকিৎসার জন্য টাকা পাঠানোর নিয়মাবলী:

বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে টাকা পাঠাতে হলে কিছু নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করতে হয়। এর মধ্যে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দেওয়া, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তৈরি করা, অনুমোদিত পরিমাণ ডলার এন্ডোর্স করা ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। নিচে বিস্তারিত ধাপগুলো আলোচনা করা হলো:
  • ধাপ ১: পাসপোর্ট প্রস্তুত রাখা
চিকিৎসার জন্য বিদেশে টাকা পাঠাতে হলে প্রথমেই আপনার পাসপোর্ট প্রস্তুত থাকতে হবে। পাসপোর্টে প্রয়োজনীয় ভিসা থাকা আবশ্যক, যা চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়া সংক্রান্ত অনুমতি প্রদান করবে।
  • ধাপ ২: চিকিৎসা প্রোফাইল খোলা
চিকিৎসার জন্য টাকা পাঠানোর আগে আপনাকে নির্দিষ্ট ব্যাংকে গিয়ে একটি "চিকিৎসা প্রোফাইল" খুলতে হবে। ব্যাংকে চিকিৎসা প্রোফাইল খোলার জন্য বেশ কিছু ডকুমেন্টের প্রয়োজন হয়। ডকুমেন্টগুলো যথাযথভাবে ব্যাংকে জমা দেওয়ার পর ব্যাংক এগুলো যাচাই করবে।
  • ধাপ ৩: প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমা দেওয়া
চিকিৎসার জন্য বিদেশে টাকা পাঠাতে কিছু বিশেষ ডকুমেন্টের প্রয়োজন হয়। এ ডকুমেন্টগুলো হলো:
  • ডাক্তারি প্রেসক্রিপশন: বাংলাদেশে ডাক্তার কর্তৃক প্রদান করা চিকিৎসার প্রেসক্রিপশন।
  • হাসপাতালের ইনভয়েস/বিল: বিদেশে যেখানে চিকিৎসা করাবেন, সেই হাসপাতালের ইনভয়েস বা বিল। এতে হাসপাতালের নাম, ঠিকানা, খরচের বিবরণ ইত্যাদি থাকতে হবে।
  • প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল রিপোর্ট: আপনার চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় মেডিক্যাল রিপোর্ট, যেগুলো বিদেশে চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন বলে ডাক্তার নির্দেশ দিয়েছেন।
  • বৈধ পাসপোর্ট ও ভিসা: আপনার বৈধ পাসপোর্টের কপি এবং চিকিৎসার জন্য প্রাপ্ত ভিসার কপি।
  • ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবরণ: বিদেশে টাকা প্রেরণের জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবরণ।
  • ধাপ ৪: ব্যাংকে প্রোফাইল তৈরি
ব্যাংকে গিয়ে এই ডকুমেন্টগুলো জমা দিতে হবে। ব্যাংক কর্মকর্তারা এ ডকুমেন্ট যাচাই করে একটি "চিকিৎসা প্রোফাইল" তৈরি করবেন। সাধারণত প্রোফাইল তৈরি করতে সাত কার্যদিবস সময় লাগে।
  • ধাপ ৫: ডলার এন্ডোর্সমেন্ট
প্রোফাইল খোলার পর আপনাকে ডলার এন্ডোর্স করতে হবে। ডলার এন্ডোর্সমেন্টের জন্য প্রাসঙ্গিক ডকুমেন্ট, যেমন- চিকিৎসা খরচের বিবরণী, বিদেশি হাসপাতালের ইনভয়েস ইত্যাদি দেখাতে হবে।
এন্ডোর্সমেন্ট প্রক্রিয়া সফলভাবে সম্পন্ন হলে নির্ধারিত ডলার বিদেশে পাঠানোর জন্য প্রস্তুত হবে।
  • ধাপ ৬: বিদেশে টাকা প্রেরণ
প্রোফাইল তৈরি এবং ডলার এন্ডোর্সমেন্ট সম্পন্ন হলে নির্ধারিত অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানো যাবে। এক্ষেত্রে প্রাপকের অ্যাকাউন্ট নম্বর, ব্যাংকের ঠিকানা এবং রাউটিং নম্বর প্রদান করতে হবে।

শর্তসমূহ

চিকিৎসা খাতে বিদেশে টাকা পাঠানোর জন্য কিছু শর্ত রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:
  • ডলারের সীমাবদ্ধতা: চিকিৎসার জন্য আপনি সর্বোচ্চ $১০,০০০ পর্যন্ত ডলার পাঠাতে পারবেন। এর বেশি পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাঠানো নিষিদ্ধ।
  • প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস: চিকিৎসা সংক্রান্ত সঠিক তথ্য ও ডকুমেন্ট দিতে হবে। যেমন: হাসপাতালের বিল, ডাক্তারি প্রেসক্রিপশন ইত্যাদি।
  • ব্যাংক নির্বাচন: শুধুমাত্র অনুমোদিত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে টাকা প্রেরণ করতে পারবেন।
  • প্রোফাইল যাচাই: ব্যাংকে জমা দেওয়া তথ্য যাচাই করার পরই চিকিৎসা প্রোফাইল তৈরি হবে এবং টাকা পাঠানোর অনুমতি মিলবে।

চিকিৎসা খাতে টাকা পাঠানোর ক্ষেত্রে করণীয় সতর্কতা

  • নিয়ম মেনে চলা: সরকারের অনুমোদিত নিয়ম অনুসরণ না করলে এটি টাকা পাচারের শামিল হবে, যা আইনত শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
  • প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ: চিকিৎসা খরচের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আগে থেকে সংগ্রহ করুন।
  • ব্যাংকের পরামর্শ নেওয়া: টাকা পাঠানোর আগে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পরামর্শ নিন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশনা প্রদান করবে।

কিছু অতিরিক্ত তথ্য

  • অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধা: কিছু ব্যাংক অনলাইন ব্যাংকিং সুবিধা প্রদান করে, যার মাধ্যমে আপনি অনলাইনে ডলার এন্ডোর্সমেন্ট ও টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেন।
  • ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ও পেওনিয়ার: বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে, যেমন চিকিৎসা খাতে, অনুমোদিত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন বা পেওনিয়ারের মতো সেবা ব্যবহার করে টাকা পাঠানো যায়।

পড়াশোনার ফি পরিশোধ এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাঠানোর নিয়ম 

বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পড়াশোনার ফি পরিশোধ করতে হলে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম ও শর্ত পালন করতে হয়। মূলত, আপনি ব্যাংকের মাধ্যমে বৈধভাবে টাকা পাঠাতে পারবেন, তবে এর জন্য আপনাকে একটি স্টুডেন্ট প্রোফাইল তৈরি করতে হবে। এই প্রোফাইল তৈরি করার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও প্রক্রিয়া নিম্নে দেওয়া হলো।
বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাঠানোর নিয়ম

শর্তসমূহ

স্টুডেন্ট প্রোফাইল তৈরি: টাকা পাঠানোর জন্য প্রথমে ব্যাংকে একটি স্টুডেন্ট প্রোফাইল তৈরি করতে হবে। এটি তৈরি করতে চাইলে আপনাকে নিম্নোক্ত কাগজপত্র জমা দিতে হবে:
  • বিদেশী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক জারি করা ভর্তি চিঠি।
  • টিউশন ফি এবং বসবাসের খরচের বিবরণ।
  • বাংলাদেশে সম্পন্ন শিক্ষাগত সনদপত্র।
  • মনোনীত ব্যক্তির বিবরণ (যিনি টাকা পাঠাবেন)।
  • বৈধ স্টুডেন্ট ভিসা এবং পাসপোর্ট।
  • শিক্ষার্থীর ছবি।

সীমাবদ্ধতা

পড়াশোনার ফি পাঠানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিত্তিতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সীমা নির্ধারণ করা হতে পারে। তাই, প্রোফাইল তৈরির সময় ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নিতে হবে।

প্রক্রিয়া

  • ধাপ ১: সর্বপ্রথম আপনার পাসপোর্ট ও বৈধ স্টুডেন্ট ভিসা থাকতে হবে।
  • ধাপ ২: ব্যাংকে গিয়ে স্টুডেন্ট প্রোফাইল তৈরির আবেদন করতে হবে।
  • ধাপ ৩: ব্যাংকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আপনার নিকট প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাইবেন। সেগুলো প্রদান করলে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রোফাইল তৈরি হয়ে যাবে।
  • ধাপ ৪: প্রোফাইল তৈরির পর আপনি ব্যাংকের মাধ্যমে সরাসরি বিদেশে শিক্ষা ফি পাঠাতে পারবেন।

ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন এর মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাঠানোর নিয়ম

ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন (Western Union) একটি বৈশ্বিক অর্থ স্থানান্তর সেবা যা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে দ্রুত ও নিরাপদে টাকা পাঠানোর সুযোগ প্রদান করে। বাংলাদেশ থেকে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে বিদেশে টাকা পাঠানোর জন্য কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম এবং শর্ত রয়েছে। নিচে এই নিয়মগুলো সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো:

ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর ধাপসমূহ

  • ধাপ ১: নিকটস্থ এজেন্ট লোকেট করা
    • বাংলাদেশে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের সেবা বিভিন্ন ব্যাংক, মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এবং নির্দিষ্ট এজেন্টের মাধ্যমে পাওয়া যায়।
    • ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের নিকটস্থ এজেন্ট বা ব্যাংক শাখা খুঁজে নিতে পারেন। এজন্য ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (www.westernunion.com) থেকে লোকেশন সার্চ করতে পারেন।
  • ধাপ ২: প্রয়োজনীয় নথিপত্র প্রস্তুত করা
    • ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে কিছু নথিপত্র প্রয়োজন হয়, যেমন:
    • জাতীয় পরিচয়পত্র (NID), পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি।
    • প্রাপক (Receiver) এর পূর্ণ নাম এবং ঠিকানা। প্রাপক দেশের আইডি অনুযায়ী নাম দিতে হবে।
    • প্রাপক দেশের সঠিক কোড সহ ফোন নাম্বার।
  • ধাপ ৩: এজেন্ট শাখায় গিয়ে তথ্য প্রদান
    • নিকটস্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন এজেন্ট শাখায় গিয়ে নিম্নোক্ত কাজগুলো সম্পন্ন করতে হবে:
    • এজেন্টকে জানাতে হবে যে আপনি বিদেশে টাকা পাঠাতে চান।
    • টাকার পরিমাণ ও দেশের নাম জানাতে হবে।
    • এজেন্ট আপনাকে একটি ফর্ম পূরণ করতে বলবেন, যেখানে আপনার ও প্রাপকের বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে।
  • ধাপ ৪: টাকা ও ফি প্রদান
    • ফর্ম পূরণের পর, আপনি টাকার পরিমাণ ও প্রযোজ্য ফি প্রদান করবেন।
    • ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন কিছু টাকা স্থানান্তর ফি গ্রহণ করে, যা স্থানান্তরের পরিমাণ এবং গন্তব্য দেশের ওপর নির্ভর করে।
  • ধাপ ৫: এমটিসিএন (MTCN) নম্বর গ্রহণ
    • টাকা এবং ফি জমা দেওয়ার পর, এজেন্ট আপনাকে একটি মানি ট্রান্সফার কন্ট্রোল নম্বর (MTCN) প্রদান করবেন।
    • এই এমটিসিএন নম্বরটি খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রাপক এই নম্বর ব্যবহার করে টাকা গ্রহণ করতে পারবেন।

শর্তসমূহ

  • পরিচয়পত্র: প্রেরকের (Sender) বৈধ পরিচয়পত্র (NID, পাসপোর্ট ইত্যাদি) অবশ্যই থাকতে হবে।
  • সীমা: ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর নির্দিষ্ট একটি পরিমাণ নির্ধারিত রয়েছে। এটি প্রেরকের দেশ এবং প্রাপকের দেশ অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। তাই এজেন্টের সাথে পরিমাণ নির্ধারণ সম্পর্কে জেনে নিন।
  • বৈধ উদ্দেশ্য: অর্থ প্রেরণের কারণ সম্পর্কে এজেন্টের কাছে সঠিক তথ্য প্রদান করতে হবে। ব্যক্তিগত, পড়াশোনা, চিকিৎসা বা অন্যান্য বৈধ প্রয়োজনে অর্থ প্রেরণ করা যাবে।

সুবিধাসমূহ

  • দ্রুত ও সহজ: ওয়েস্টার্ন ইউনিয়নের মাধ্যমে টাকা পাঠানো খুবই সহজ এবং সাধারণত কয়েক মিনিটের মধ্যেই প্রাপক টাকাটি সংগ্রহ করতে পারেন।
  • সীমাহীন স্থানান্তর: বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন এজেন্ট রয়েছে, ফলে আপনার প্রাপক যে কোনো জায়গা থেকেই টাকা সংগ্রহ করতে পারেন।

পেওনিয়ার এর মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাঠানোর নিয়ম

পেওনিয়ার (Payoneer) হলো একটি বৈশ্বিক অর্থ লেনদেন ও পেমেন্ট গেটওয়ে যা বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থ পাঠানোর ও গ্রহণের জন্য নিরাপদ এবং সহজ সমাধান প্রদান করে। তবে এটি সাধারণত ব্যবসায়িক ও ফ্রিল্যান্সারদের জন্য ব্যবহৃত হয়। 

পেওনিয়ারের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক লেনদেন করা সহজ হলেও, এটি সরাসরি বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাঠানোর কিছু নির্দিষ্ট শর্ত এবং নিয়মাবলী মেনে চলে। নিচে পেওনিয়ারের মাধ্যমে অর্থ পাঠানোর ধাপগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো:

পেওনিয়ার একাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া

বিদেশে টাকা পাঠানোর জন্য প্রথমে আপনাকে একটি পেওনিয়ার একাউন্ট খুলতে হবে। পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট খোলার ধাপগুলো নিম্নরূপ:
  • পেওনিয়ার ওয়েবসাইটে যান: www.payoneer.com ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে "Sign Up" বা "Register" বাটনে ক্লিক করুন।
  • তথ্য পূরণ: নিজের ব্যক্তিগত তথ্য, ইমেইল ঠিকানা, এবং ব্যাংক একাউন্টের তথ্য দিয়ে নিবন্ধন ফর্মটি পূরণ করুন।
  • পরিচয় যাচাইকরণ: একাউন্ট খোলার সময় পেওনিয়ার আপনার পরিচয় যাচাইয়ের জন্য NID, পাসপোর্ট, বা ড্রাইভিং লাইসেন্সের মতো বৈধ পরিচয়পত্র চাইবে। এই তথ্য সঠিকভাবে প্রদান করতে হবে।
  • ব্যাংক অ্যাকাউন্ট লিঙ্ক: আপনার বাংলাদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পেওনিয়ারের সাথে লিঙ্ক করুন, যেখান থেকে টাকা জমা ও উত্তোলন করবেন।

পেওনিয়ারের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর ধাপসমূহ

  • ১. ফান্ড রিসিভ করুন: পেওনিয়ারের মাধ্যমে সরাসরি অর্থ পাঠানোর জন্য সাধারণত আপনাকে প্রথমে কিছু অর্থ আপনার পেওনিয়ার অ্যাকাউন্টে রিসিভ করতে হবে। অর্থ রিসিভ করার সাধারণ মাধ্যমগুলো হলো:
    • ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্ম থেকে পেমেন্ট গ্রহণ।
    • ই-কমার্স পেমেন্ট।
    • অন্যান্য পেওনিয়ার ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে টাকা গ্রহণ।
  • ২. ‘মেক এ পেমেন্ট’ অপশন ব্যবহার করুন:
    • একবার আপনার পেওনিয়ার অ্যাকাউন্টে ফান্ড এভেইলেবল হলে আপনি "Make a Payment" ফিচারের মাধ্যমে অন্য কোনো পেওনিয়ার অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাতে পারবেন।
    • এই অপশনটি ব্যবহার করার জন্য আপনার অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফান্ড থাকতে হবে।
  • ৩. প্রাপককে টাকা পাঠানো:
    • "Make a Payment" অপশনে ক্লিক করার পর প্রাপকের ইমেইল ঠিকানা এবং পরিমাণ ইনপুট করে টাকার লেনদেন সম্পন্ন করুন।
    • এই প্রক্রিয়ায় টাকা সরাসরি প্রাপকের পেওনিয়ার অ্যাকাউন্টে জমা হবে।

বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা উত্তোলন

বাংলাদেশ থেকে পেওনিয়ার ব্যবহারকারীরা সরাসরি বিদেশে টাকা পাঠাতে পারবেন না, তবে কিছু উপায়ে টাকা ট্রান্সফার বা ব্যয় করা যায়:
  • পেওনিয়ার মাস্টারকার্ড: পেওনিয়ারের প্রিপেইড মাস্টারকার্ডের মাধ্যমে আপনি বিদেশে কেনাকাটা করতে পারবেন এবং এটিএম থেকে নগদ অর্থ উত্তোলন করতে পারবেন।
  • ব্যাংক ট্রান্সফার: প্রাপ্ত অর্থ নিজের বাংলাদেশি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে উত্তোলন করতে পারেন।

শর্তাবলী

  • অ্যাকাউন্ট ভেরিফিকেশন: পেওনিয়ার অ্যাকাউন্ট ব্যবহারের জন্য আপনার পরিচয়পত্র যাচাই করা আবশ্যক।
  • ফান্ড সোর্স: বৈধ উপায়ে ফান্ড রিসিভ করতে হবে, যেমন ফ্রিল্যান্সিং, ই-কমার্স পেমেন্ট, বা বৈধ ব্যবসা।
  • লেনদেন ফি: পেওনিয়ার কিছু পরিমাণ সার্ভিস ফি কেটে রাখে। স্থানান্তরের ধরণ ও পরিমাণ অনুসারে এই ফি নির্ধারিত হয়।
  • স্থানান্তর সীমা: নির্দিষ্ট কিছু সীমাবদ্ধতার মধ্যেই লেনদেন করা যাবে, যা পেওনিয়ার অ্যাকাউন্টের ধরন এবং ব্যবহারকারীর অবস্থার উপর নির্ভরশীল।

সুবিধাসমূহ

  • গ্লোবাল লেনদেন: পেওনিয়ারের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টাকা পাঠানো এবং গ্রহণ করা যায়।
  • সহজ ব্যাংক ট্রান্সফার: আপনার প্রাপ্ত অর্থ সরাসরি আপনার স্থানীয় ব্যাংক অ্যাকাউন্টে উত্তোলন করা যায়।
  • পেওনিয়ার কার্ড: অনলাইনে বা যেকোনো ভিসা/মাস্টারকার্ড সমর্থিত স্টোরে কেনাকাটা করতে পারবেন।

উপসংহার

বাংলাদেশ থেকে বৈধভাবে টাকা পাঠানো একটি সুশৃঙ্খল প্রক্রিয়া, যা সঠিক নিয়ম অনুসরণ করলে সহজ এবং ঝামেলামুক্ত হয়। বৈধ পথে লেনদেন করলে আইনগতভাবে সুরক্ষা পাওয়া যায় এবং বিদেশে প্রয়োজনীয় অর্থ পাঠানো সম্ভব হয়। তাই সঠিকভাবে নিয়ম মেনে টাকা পাঠানো নিরাপদ এবং কার্যকরী একটি মাধ্যম।

"বাংলাদেশ থেকে বিদেশে টাকা পাঠানোর নিয়ম" পোস্ট সম্পর্কে আপনার কোনো মতামত বা প্রশ্ন থাকলে নিচের কমেন্ট বক্সে শেয়ার করতে ভুলবেন না! আপনার প্রতিটি কমেন্ট আমাদের জন্য মূল্যবান। 

ধন্যবাদ
সামরিন ইনফো। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সামরিন ইনফো এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url