ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের নিয়ম, বিয়ে নিয়ে ইসলামিক উক্তি

ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন, যা ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে শান্তি এবং স্থিতি আনে। বৈধ সম্পর্কের মাধ্যমে পরিবার গঠন ও হালাল জীবনযাপন ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়। তাই আমাদের প্রত্যেকের বিয়ে সংক্রান্ত নিয়ম, শর্তাবলী এবং বিয়ে নিয়ে ইসলামিক উক্তি সম্পর্কে সঠিক ধারণা লাভ করা উচিত। এই পোস্টে ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের নিয়ম, শর্তাবলী এবং বিয়ে নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইসলামিক উক্তি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের নিয়ম, বিয়ে নিয়ে ইসলামিক উক্তি
চলুন যেনে নেওয়া যাক "ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের নিয়ম, বিয়ে নিয়ে ইসলামিক উক্তি" সম্পর্কে বিস্তারিত।

১. ভূমিকা

ইসলামে বিয়ে একটি পবিত্র ইবাদত এবং গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক দায়িত্ব, যা জীবনে শান্তি, সম্প্রীতি এবং হালাল সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখে। ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের মাধ্যমে শুধু ব্যক্তিগত সম্পর্কই নয়, বরং একটি সুসংহত পরিবার ও সমাজ গড়ে তোলার ভিত্তি স্থাপন করা হয়।

বিয়ের নিয়ম, শর্তাবলী এবং বৈবাহিক জীবনের নীতি-কানুন কুরআন ও হাদিসের আলোকে নির্ধারিত হয়েছে, যা প্রতিটি মুসলিমের জন্য মানা জরুরি। ইসলামে বিয়ে শুধু একটি চুক্তি নয়, এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি উপায়। তাই, বিয়ে সম্পর্কিত সঠিক নির্দেশনা এবং ইসলামিক উক্তি জানা প্রতিটি বিবাহযোগ্য ব্যক্তির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

২. বিয়ের উপযুক্ত সময়: কোন লক্ষণ দেখে বোঝা যাবে যে বিয়ে দিতে হবে?

ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের নিয়ম, বিয়ে নিয়ে ইসলামিক উক্তি
ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা মানুষের জীবনকে পূর্ণতা দেয় এবং হালাল সম্পর্ক স্থাপন করতে সহায়ক হয়। অনেক সময় পরিবারের সদস্যরা বা ব্যক্তি নিজে বুঝতে পারেন না কখন বিয়ের সময় এসেছে বা কবে বিয়ে দেওয়া উচিত। নিচে কিছু সাধারণ লক্ষণ উল্লেখ করা হলো, যা দেখে বোঝা যাবে বিয়ের জন্য উপযুক্ত সময় এসেছে:

২.১. মানসিক ও শারীরিক পরিপক্বতা

বিয়ের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ হলো মানসিক ও শারীরিক পরিপক্বতা। যখন একজন ব্যক্তি নিজের দায়িত্ব নিতে সক্ষম হয় এবং মানসিকভাবে একটি সম্পর্ক পরিচালনা করার জন্য প্রস্তুত থাকে, তখন বুঝতে হবে যে সে বিয়ের জন্য উপযুক্ত।

২.২. হালাল সম্পর্ক গড়ার প্রয়োজন অনুভব করা

যদি একজন ব্যক্তি অনুভব করে যে হালাল উপায়ে বৈধ সম্পর্ক স্থাপন করার প্রয়োজন, তখন তা বিয়ের উপযুক্ত সময় নির্দেশ করে। ইসলামে অবৈধ সম্পর্ক কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং হালাল সম্পর্ক স্থাপন করার মাধ্যম হিসেবে বিয়ে করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

২.৩. একাকীত্ব এবং মানসিক সমর্থনের প্রয়োজন

যখন একজন ব্যক্তি একাকীত্ব অনুভব করে এবং মনে হয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানসিক সমর্থনের প্রয়োজন, তখন তা বিয়ের একটি স্বাভাবিক লক্ষণ। একে অপরের প্রতি সমর্থন এবং ভালোবাসা দাম্পত্য জীবনে মানসিক শান্তি আনে।

২.৪. পেশাগত এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা

যখন একজন ব্যক্তি আর্থিকভাবে স্থিতিশীল হয়ে উঠে এবং পেশাগত দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়, তখন তা বিয়ের জন্য প্রস্তুতির লক্ষণ। ইসলামে পেশাগত দায়িত্ব এবং আর্থিক স্থিতিশীলতার গুরুত্ব দেয়া হয়েছে যাতে বৈবাহিক জীবন সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়।

২.৫. পরিবার ও সমাজের চাপ

কখনও কখনও পরিবার ও সমাজ থেকে বিয়ের জন্য চাপ আসতে পারে, যা সঠিকভাবে বিবেচনা করা উচিত। যদি সামাজিক চাপ বাস্তবিক হয় এবং মানসিক প্রস্তুতি থাকে, তবে বিয়ে করার সময় হতে পারে।

২.৬. নৈতিক অবক্ষয় থেকে রক্ষা পাওয়ার প্রয়োজন

ইসলামে নিজেকে নৈতিক অবক্ষয় থেকে রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি একজন ব্যক্তি মনে করেন যে অবৈধ সম্পর্ক বা পাপাচারের দিকে ঝুঁকছেন, তবে সেই পরিস্থিতিতে বিয়ে করা উচিত। বিয়ে একজনকে পাপমুক্ত জীবনযাপনের সুযোগ করে দেয়।

২.৭. পারিবারিক চাপ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

যদি পরিবার থেকে বিয়ের জন্য চাপ আসে এবং ভবিষ্যতে স্থিতিশীল পরিবার গঠন করার ইচ্ছা থাকে, তবে এটি বিয়ের সময় হয়েছে বলে বোঝা যেতে পারে। ভবিষ্যতের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা থাকলে বিয়ের মাধ্যমে সেই পরিকল্পনাকে সফল করা সম্ভব।

২.৮. বিবাহিত জীবনের প্রতি আগ্রহ

কখনও কখনও ব্যক্তিগত ইচ্ছা ও চাহিদার কারণে বিয়ে করার সময় আসে। যদি কেউ মনে করে যে তার জীবনসঙ্গীর প্রয়োজন এবং বৈবাহিক জীবনের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে, তবে এটি বিয়ের প্রস্তুতির একটি ইঙ্গিত হতে পারে।

২.৯. পিতা-মাতার সন্তুষ্টি ও পরামর্শ

ইসলামে পিতা-মাতার পরামর্শ এবং সন্তুষ্টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি পিতা-মাতা মনে করেন যে বিয়ের জন্য উপযুক্ত সময় এসেছে এবং তারা পরামর্শ দেন, তবে সেটা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যও পিতা-মাতার কথার মূল্য রয়েছে।

২.১০. ধর্মীয় শিক্ষা ও মূল্যবোধের পূর্ণতা

যদি একজন ব্যক্তি মনে করেন যে তিনি ইসলামী শিক্ষা এবং মূল্যবোধ অনুযায়ী জীবনযাপন করতে চান এবং তা পূর্ণ করতে বিয়ে করা জরুরি, তবে সেটাও বিয়ে দেওয়ার একটি লক্ষণ। ইসলামে বিয়ে করা নবী করীম (সা.)-এর সুন্নত হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।

৩. ইসলামে বিয়ের শর্তাবলী

ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের নিয়ম, বিয়ে নিয়ে ইসলামিক উক্তি
ইসলামে বিয়ে হলো একটি বৈধ সম্পর্ক, যা নির্দিষ্ট কিছু শর্তাবলীর উপর ভিত্তি করে সম্পন্ন হয়। এই শর্তগুলো মেনে বিয়ে সম্পাদন করা একজন মুসলিমের জন্য বাধ্যতামূলক এবং এগুলোর মাধ্যমেই বৈবাহিক সম্পর্ক ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ হয়। নিচে ইসলামে বিয়ের শর্তাবলী নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

৩.১. উভয়ের সম্মতি

ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের প্রথম এবং প্রধান শর্ত হলো উভয় পক্ষের সম্মতি। অর্থাৎ, স্বামী ও স্ত্রী দুজনেরই বিয়ের ব্যাপারে পূর্ণ সম্মতি থাকতে হবে। কোনো চাপ বা বাধ্যবাধকতার মাধ্যমে বিয়ে সম্পন্ন করা ইসলামে নিষিদ্ধ। স্বেচ্ছায়, আন্তরিকভাবে বিয়েতে সম্মতি দিতে হবে।

৩.২. দুইজন সাক্ষীর উপস্থিতি

ইসলামে বিয়ে সম্পন্ন করার জন্য কমপক্ষে দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম সাক্ষীর উপস্থিতি আবশ্যক। এই সাক্ষীরা বিয়ের চুক্তির বৈধতার প্রমাণ দেয় এবং বিয়ে সম্পন্ন করার প্রক্রিয়াকে স্বীকৃতি দেয়। সাক্ষী ছাড়া বিয়ে ইসলামে বৈধ নয়।

৩.৩. মহর (পণ) নির্ধারণ

ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের অন্যতম শর্ত হলো মহর বা পণ নির্ধারণ করা। মহর হলো স্ত্রীর অধিকার এবং এটি স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীর প্রতি একটি উপহার। মহর বিয়ের শর্ত হিসেবে উল্লেখযোগ্য এবং এটি স্ত্রীর সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক। মহরের পরিমাণ নবী করীম (সা.) এর সুন্নাহ অনুসারে হতে হবে এবং তা স্ত্রীর আর্থিক অবস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত।

৩.৪. বিবাহযোগ্যতা

ইসলামে বিয়ের শর্তাবলীর মধ্যে অন্যতম শর্ত হলো উভয় পক্ষকে বিবাহযোগ্য হতে হবে। অর্থাৎ, ইসলামিক বিধান অনুযায়ী যাদের বিয়ে নিষিদ্ধ, সেসব সম্পর্ক এড়িয়ে যেতে হবে। পুরুষ ও নারীকে বৈধ হতে হবে এবং কোনো নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা উচিত নয়।

ইসলামের দৃষ্টিতে যাদের সাথে বিয়ে নিষিদ্ধ তারা হলেন-
  • রক্ত সম্পর্কিত নিষিদ্ধতা- মা, বাবা, দাদা-দাদি, নানি, ভাই-বোন, সন্তান এবং তাদের সন্তানদের সাথে বিয়ে হারাম।
  • দুগ্ধ সম্পর্ক- যদি কোনো নারী অন্য কোনো শিশুকে দুগ্ধ পান করান, তবে সেই দুগ্ধ মাতার সন্তান এবং সেই শিশুর মধ্যে বিয়ে নিষিদ্ধ।
  • বিবাহ সূত্রে নিষিদ্ধ সম্পর্ক- স্ত্রী/স্বামীর মা বা বাবা, স্ত্রীর কন্যা বা স্ত্রীর নাতনি, ছেলের বউ, বাবা বা দাদার স্ত্রী এসব সম্পর্কে বিয়ে করা নিষিদ্ধ।
  • বিভিন্ন ধর্মের ব্যক্তির সাথে বিয়ে নিষিদ্ধ- ইসলামে একজন মুসলমান পুরুষ বা নারীর জন্য ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সাথে বিয়ে করার ক্ষেত্রে বিয়ে করা নিষিদ্ধ। তবে, মুমুসলমান পুরুষ বা নারীর জন্য ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের সাথে বিয়ে করতে হলে সেই নারী বা পুরুষকে অবশ্যই ইসলাম ধর্মে গ্রহণ করতে হবে।

৩.৫. কাবিননামা বা বিবাহ চুক্তি

কাবিননামা বা বিবাহ চুক্তি ইসলামে বিয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। এটি লিখিত আকারে হতে পারে, যা স্বামী-স্ত্রীর দায়িত্ব এবং অধিকার নির্ধারণ করে দেয়। এটি একটি বৈধ নথি হিসেবে কাজ করে এবং ভবিষ্যতে যে কোনো ধরনের বিরোধ বা জটিলতা এড়াতে সহায়ক হয়। কাবিননামায় উভয়ের সম্মতি এবং শর্তাবলী স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে।

৩.৬. উভয়ের পূর্ণ বিবেচনা এবং সক্ষমতা

ইসলামে বিয়ের জন্য স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে উভয়ের পূর্ণ বিবেচনা থাকা অপরিহার্য। স্বামী-স্ত্রীকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে তারা কী ধরনের দায়িত্ব নিচ্ছেন এবং বৈবাহিক সম্পর্ক কীভাবে পরিচালিত হবে। পাশাপাশি উভয়কেই শারীরিক ও মানসিকভাবে বিবাহিত জীবনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।

৩.৭. বিয়ে ইসলামী বিধি অনুযায়ী সম্পন্ন করা

ইসলামে বিয়ে সম্পন্ন করার জন্য ইসলামী বিধান অনুসারে কাজ করা আবশ্যক। অর্থাৎ, বিয়ের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে ইসলামী নিয়ম মেনে সম্পন্ন হতে হবে এবং এতে কোনো প্রকার অবৈধ কার্যকলাপ বা বিধিবহির্ভূত কাজ থাকা উচিত নয়। ইসলামী শিষ্টাচার মেনে বিয়ের আয়োজন করা জরুরি।

৪. বিয়ের ফরজ কি কি

ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। একজন মুসলিম পুরুষ ও নারীর মধ্যে বিবাহের মাধ্যমে পারিবারিক জীবন শুরু হয়। বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার জন্য কিছু ফরজ বা বাধ্যতামূলক শর্ত রয়েছে, যা পূরণ করা ছাড়া বিয়ে বৈধ হয় না। নিচে বিয়ের ফরজ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
  • ইজাব ও কবুল: বিয়ের প্রস্তাব (ইজাব) এবং তা গ্রহণ (কবুল) করতে হয়। এই চুক্তিটি মৌখিকভাবে এবং প্রকাশ্যে করতে হয়।
  • মোহর (দেনমোহর): বিয়ের সময় স্বামীর পক্ষ থেকে স্ত্রীর জন্য মোহর নির্ধারণ করা আবশ্যক। এটি স্ত্রীর ইজ্জত ও সম্মানের প্রতীক।
  • প্রাপ্তবয়স্ক ও বিবাহযোগ্য হওয়া: উভয় পক্ষকেই প্রাপ্তবয়স্ক ও শারীরিক-মানসিকভাবে বিবাহের জন্য সক্ষম হতে হবে।
  • উইলি (অভিভাবক): নারীর জন্য অভিভাবকের (উইলি) উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। বিয়ের আগে অভিভাবকের সম্মতি নিতে হয়।
  • সাক্ষী: বিয়ে সম্পন্ন হতে হলে দুইজন মুসলিম পুরুষ বা একজন পুরুষ ও দুইজন নারীর উপস্থিতিতে সাক্ষী থাকা ফরজ।
  • নিয়ত বা উদ্দেশ্য: বিয়ের উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা এবং পবিত্র জীবনযাপন করা।
  • বিয়ের ঘোষণা: বিয়ে গোপনে না করে তা প্রকাশ্যে ঘোষণা করতে হয়, যা বিয়ের বৈধতা নিশ্চিত করে।

৫. ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের নিয়ম

ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের নিয়ম, বিয়ে নিয়ে ইসলামিক উক্তি
ইসলামে বিবাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত ও সামাজিক চুক্তি। এটি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি মাধ্যম, এবং মানব জীবনের একটি পবিত্র সম্পর্ক স্থাপন করে। বিবাহের প্রক্রিয়া যথাযথ ইসলামী নিয়ম অনুসরণ করে সম্পন্ন করতে হয়। নিচে ইসলামী নিয়ম অনুযায়ী বিবাহ পড়ানোর বিস্তারিত নির্দেশনা দেয়া হলো:

৫.১. কনের সম্মতি ও অনুমতি

বিবাহের আগে কনের সম্মতি বা অনুমতি নেওয়া অপরিহার্য। ইসলামে কাউকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিবাহ করতে বাধ্য করা নিষিদ্ধ। কোরআনের নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো নারীর উপর জোরপূর্বক বিবাহ চাপিয়ে দেওয়া বৈধ নয়। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেছেন:

“হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্য বৈধ নয় যে, তোমরা জোরপূর্বক নারীদের উত্তরাধিকারী হবে।”
(সুরা নিসা, আয়াত: ১৯)

নবী করিম (সা.) বলেছেন, কোনো বিধবা নারীর সম্মতি ছাড়া এবং কুমারী নারীর অনুমতি ছাড়া তাকে বিয়ে দেওয়া যাবে না। কুমারী নারীর অনুমতির প্রমাণ তার চুপ থাকা। (বুখারি: ৫১৩৬)

৫.২. বিবাহের খুতবা

বিবাহের খুতবা হলো ইসলামী বিবাহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা বিবাহ শুরু করার আগে প্রদান করা হয়। খুতবা দেওয়ার জন্য প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা (হামদ ও সানা) করা হয়, অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। এরপর নবী করিম (সা.) এর উপর দরুদ পাঠ করা হয়। খুতবার সময় পবিত্র কোরআনের তিনটি বিশেষ আয়াত পাঠ করা হয়, যা বিবাহের গুরুত্ব এবং দাম্পত্য জীবনের আদর্শ নির্দেশনা দেয়।

এই তিনটি আয়াত হলো:
  • সুরা নিসা (আয়াত: ১): এতে মানুষের সৃষ্টি এবং আল্লাহর প্রতি তাকওয়া অবলম্বনের কথা বলা হয়েছে।
  • সুরা আলে ইমরান (আয়াত: ১০২): এতে আল্লাহর ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আল্লাহর আদেশ পালন করার আদেশ রয়েছে।
  • সুরা আহযাব (আয়াত: ৭০-৭১): এতে মুমিনদের সত্য কথা বলার এবং আল্লাহর প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে তাদের কাজ ও জীবন শুদ্ধ হয়।
এই আয়াতগুলো বিবাহের আগে পাঠ করা হয় যাতে বর-কনে এবং উপস্থিত সবাই আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী জীবনযাপনের প্রতি অনুপ্রাণিত হন এবং তাদের বিবাহে আল্লাহর বরকত নাযিল হয়। (সুনানে আবু দাউদ ২১১৮)

৫.৩. ইজাব (প্রস্তাব) ও কবুল (গ্রহণ)

  • বিবাহের মূল প্রক্রিয়া হলো ইজাব (প্রস্তাব দেওয়া) এবং কবুল (প্রস্তাব গ্রহণ করা)।
  • কনের অভিভাবক (ওয়ালী) বরের সামনে কনের পরিচয় এবং মোহরানার পরিমাণ উল্লেখ করে বিবাহের প্রস্তাব দেন। এটি ‘ইজাব’ হিসেবে পরিচিত।
  • বরকে উক্ত প্রস্তাবের ভিত্তিতে "কবুল" করতে বলা হয়। বর উচ্চস্বরে বলেন, "আমি গ্রহণ করলাম" বা "কবুল"।
  • এটি সাধারণত তিনবার উচ্চারণ করা হয়, যদিও একবার বললেই তা বৈধ হয়। বর বোবা হলে, তিনি লিখিত বা ইশারার মাধ্যমে সম্মতি প্রকাশ করতে পারেন।

৫.৪. সাক্ষী ও সাক্ষ্যগ্রহণ

ইসলামে বিবাহ বৈধ হওয়ার জন্য কমপক্ষে দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ মুসলিম সাক্ষী থাকতে হবে। এরা বিবাহের প্রস্তাব এবং কবুল প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করবেন। সাক্ষীদের উপস্থিতি ছাড়া বিবাহ বৈধ হয় না।

৫.৫. মোহর

মোহর হলো কনের অধিকার, যা তাকে প্রদান করতে হয়। এটি বিয়ের প্রস্তাবের সময় উল্লেখ করতে হয় এবং পাত্রকে তা কনেকে প্রদান করতে বাধ্য করা হয়। মোহরের পরিমাণ পাত্র-পাত্রীর সম্মতিতে নির্ধারণ করা হয়।

৫.৬. সুন্নতি দোয়া

বিবাহ সম্পন্ন হওয়ার পর উপস্থিত সবাই বর-কনের জন্য দোয়া করেন। সুন্নতি দোয়া হলো:

উচ্চারণ- "বারাকাল্লাহু লাকা, ওয়া বারাকা আলাইকা, ওয়া জামাআ বাইনাকুমা ফি খাইরিন।"

অর্থ- “আল্লাহ তোমার জন্য বরকত দিন, তোমার ওপর বরকত দান করুন এবং তোমাদের দুজনকে কল্যাণের সঙ্গে একত্রিত করুন।”

৫.৭. বিয়ের পরে দোয়া ও পরামর্শ

বিয়ের পর নবদম্পতিকে ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী জীবনযাপন করার পরামর্শ দেওয়া হয়। আল্লাহর হুকুম পালন করা, পরস্পর সম্মান ও ভালোবাসার সম্পর্ক বজায় রাখা, এবং দাম্পত্য জীবনে একে অপরের প্রতি যত্নশীল হওয়া ইসলামের অন্যতম মূলনীতি।

৬. কনের অভিভাবক হওয়ার জন্য শর্ত

ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের নিয়ম, বিয়ে নিয়ে ইসলামিক উক্তি
ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল কনের অভিভাবক বা ওয়ালী এর উপস্থিতি। ওয়ালী ছাড়া কোনো বিয়ে বৈধ নয়, এবং এই অভিভাবকত্ব গ্রহণের জন্য নির্দিষ্ট কিছু শর্ত আছে যা কনের অভিভাবক হওয়ার যোগ্যতা নির্ধারণ করে। নিচে কনের অভিভাবক হওয়ার ৬টি শর্ত আলোচনা করা হলো:
  • মুসলমান হতে হবে- অভিভাবক অবশ্যই মুসলমান হতে হবে। অমুসলিম ব্যক্তি মুসলমান কনের অভিভাবক হতে পারবেন না।
  • প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে- অভিভাবককে প্রাপ্তবয়স্ক (বালেগ) হতে হবে, কারণ বিয়ে সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনে পরিপক্বতা দরকার।
  • সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হতে হবে- অভিভাবককে মানসিকভাবে সুস্থ ও বিবেকবান হতে হবে।
  • ন্যায়পরায়ণ ও সত্‍ হতে হবে- অভিভাবককে অবশ্যই ন্যায়পরায়ণ এবং সত্‍ হতে হবে, যেন তিনি কনের স্বার্থ সঠিকভাবে রক্ষা করতে পারেন।
  • নিকটাত্মীয় হতে হবে- কনের পরিবারের নিকটাত্মীয় পুরুষ (বাবা, চাচা, ভাই ইত্যাদি) অভিভাবক হবেন।
  • সম্মত হতে হবে- অভিভাবকের দায়িত্ব গ্রহণে তার সম্মতি ও ইচ্ছা থাকা আবশ্যক।

৭. কালিমা পড়ে বিয়ে করার নিয়ম

ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের নিয়ম, বিয়ে নিয়ে ইসলামিক উক্তি
ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে একটি পবিত্র এবং গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি, যা ধর্মীয় বিশ্বাস এবং নিয়ম-নীতি মেনে সম্পন্ন করতে হয়। "কালিমা পড়ে বিয়ে" বলতে সাধারণত বোঝানো হয়, অমুসলিম কেউ যদি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে বিয়ে করতে চান, তবে তাকে প্রথমে ইসলাম গ্রহণ করতে হবে। এরপর ইসলামিক নিয়ম অনুযায়ী বিবাহ সম্পন্ন করা যাবে। নিচে কালিমা পড়ে বিয়ে করার প্রক্রিয়া বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো:

৭.১. ইসলাম গ্রহণ (শাহাদা)

যদি বর বা কনে অমুসলিম হন এবং ইসলাম গ্রহণ করতে চান, তবে তাকে প্রথমে কালিমা তায়্যিবা "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ" পড়তে হবে। এর মাধ্যমে তিনি আল্লাহর একত্ববাদ এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর নবুওতকে মেনে ইসলাম ধর্মে প্রবেশ করবেন। ইসলাম গ্রহণ করার সময় নিয়ত বা ইচ্ছা পরিষ্কার থাকতে হবে এবং এটি হৃদয় থেকে হতে হবে।

৭.২. পবিত্রতা বজায় রাখা

ইসলাম গ্রহণের পর ব্যক্তিকে পবিত্রতা রক্ষা করতে হবে। ইসলাম গ্রহণের পর গোসল করা সুন্নত এবং এটি নতুন জীবনের শুরু হিসাবে গণ্য করা হয়। এই পবিত্রতা রক্ষা করে পরবর্তীতে ইসলামের অন্যান্য বিধিবিধান পালন করতে হবে।

৭.৩. বিয়ের নিয়ম

ইসলামে বিয়ের জন্য কিছু বিশেষ নিয়ম পালন করা হয়। কালিমা পড়ার পর যখন বর বা কনে ইসলাম গ্রহণ করেছেন, তখন তাদের বিবাহের জন্য নিচের নিয়মগুলো অনুসরণ করতে হবে:
  • ওয়ালী (অভিভাবক): কনের পক্ষ থেকে একজন অভিভাবক বা ওয়ালী উপস্থিত থাকতে হবে।
  • সাক্ষী: দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম পুরুষ সাক্ষী থাকতে হবে।
  • মেহের নির্ধারণ: কনের জন্য মেহের নির্ধারণ করতে হবে, যা তার অধিকার।
  • ইজাব-কবুল: বিয়ের ক্ষেত্রে বর ও কনে উভয়ের সম্মতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাদেরকে ইজাব (বিয়ের প্রস্তাব) এবং কবুল (বিয়ের গ্রহণ) করতে হবে।

৭.৪. ইসলামিক জীবনধারা অনুসরণ

কালিমা পড়ে ইসলাম গ্রহণ করার পর মুসলিম ব্যক্তির জীবনে ইসলামের প্রতিটি নিয়ম মেনে চলা আবশ্যক। বিয়ের পর তাদের অবশ্যই সালাত আদায়, রোজা রাখা এবং ইসলামের অন্যান্য ফরজ বিধান মেনে চলতে হবে।

৭.৫. পারিবারিক ও সামাজিক সমর্থন

ইসলাম গ্রহণ করে বিয়ে করলে পরিবার এবং সমাজ থেকে সমর্থন পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ। এতে নতুন দম্পতির জন্য একটি স্থিতিশীল জীবন শুরু করা সহজ হয় এবং ইসলামের আদর্শ অনুযায়ী জীবন যাপন করতে উৎসাহ পায়।

৮. মসজিদে বিবাহ পড়ানোর নিয়ম

ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের নিয়ম, বিয়ে নিয়ে ইসলামিক উক্তি
ইসলামে বিয়ে একটি পবিত্র সামাজিক এবং ধর্মীয় চুক্তি। বিয়ের আয়োজন যে কোনো হালাল স্থানে করা যেতে পারে, তবে মসজিদে বিবাহ সম্পাদন করা একটি সুন্দর ও সম্মানজনক পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হয়। মসজিদ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র, তাই মসজিদে বিয়ে পড়ানোর মধ্যে একটি বিশেষ ধর্মীয় গুরুত্ব রয়েছে। মসজিদে বিয়ে পড়ানোর কিছু নিয়ম এবং শিষ্টাচার রয়েছে, যা অনুসরণ করা উচিত। নিচে মসজিদে বিবাহ পড়ানোর নিয়মগুলি বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলো:

৮.১. মসজিদ নির্বাচনের নিয়ম

মসজিদে বিয়ে পড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট মসজিদের ইমাম ও পরিচালনা কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের অনুমতি নিতে হবে। কিছু মসজিদে বিবাহের জন্য আলাদা কিছু নিয়ম থাকতে পারে, সেগুলোও মানতে হবে।

৮.২. বিয়ের জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্বাচন

মসজিদে বিয়ে পড়ানোর সময় সাধারণত মসজিদের নামাজের মূল কক্ষ ব্যবহার করা হয় না বরং নির্দিষ্ট কোনো অংশ বা আলাদা একটি স্থান ব্যবহার করা হয়, যেখানে অতিথিরা বসতে পারেন। মসজিদের পবিত্রতা বজায় রাখতে নামাজের স্থান দূষণ বা অশান্ত না হয় সেদিকে বিশেষ নজর রাখতে হয়।

৮.৩. পরিচ্ছন্নতা ও পোশাক

মসজিদে প্রবেশের আগে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতার দিকে খেয়াল রাখা গুরুত্বপূর্ণ। পাত্র-পাত্রীর পোশাক এবং অতিথিদের পোশাক শালীন ও ইসলামিক নিয়ম মেনে হওয়া আবশ্যক। মসজিদে বিয়ে পড়ানোর সময় পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা বসার ব্যবস্থা করা হলে তা আরও ভালো হয়।

৮.৪. ওয়ালী এবং সাক্ষী

ইসলামে বিবাহের জন্য কনের পক্ষ থেকে অভিভাবক (ওয়ালী) থাকা বাধ্যতামূলক। ওয়ালীর উপস্থিতি ছাড়া বিয়ে বৈধ নয়। এছাড়া, বিয়েতে দুইজন প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম পুরুষ সাক্ষী থাকা আবশ্যক, যারা বিয়ের ইজাব ও কবুল প্রক্রিয়াটি দেখবেন।

৮.৫. মেহের নির্ধারণ

বিয়ের আগে পাত্র-পাত্রীর পরিবারের মধ্যে মেহের এর পরিমাণ নিয়ে আলোচনা সম্পন্ন করতে হবে। মেহের হল কনের অধিকার, যা পাত্র তাকে প্রদান করবে। মসজিদে বিয়ে পড়ানোর সময় মেহেরের পরিমাণ ইমাম বা মসজিদ কর্তৃপক্ষের সামনে প্রকাশ করতে হবে।

৮.৬. ইজাব ও কবুল (প্রস্তাব ও গ্রহণ)

বিয়ের মূল অংশ হচ্ছে ইজাব ও কবুল। ইজাব হলো বিয়ের প্রস্তাব এবং কবুল হলো সেই প্রস্তাব গ্রহণ করা। ইমাম বিয়ের প্রক্রিয়া শুরু করে বরকে কনের সাথে বিবাহের প্রস্তাব দেন, এবং বর তা কবুল করলে বিবাহ সম্পন্ন হয়। এটি সাধারণত তিনবার উচ্চারণ করে কবুল করা হয়।

৮.৭. দোয়া এবং মোনাজাত

বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর ইমাম সাধারণত দোয়া ও মোনাজাত করেন। আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা এবং নবদম্পতির জন্য সুখী ও বরকতময় জীবনের জন্য দোয়া করা হয়। এছাড়া, বিয়ের সঠিকতা ও স্বীকৃতি নিশ্চিত করতে পাত্র-পাত্রীর জন্য বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

৯. বিয়ে পড়ানোর দোয়া

ইসলামে বিয়ে পড়ানোর সময় দোয়া এবং মোনাজাতের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এটি নবদম্পতির নতুন জীবনের জন্য আল্লাহর কাছ থেকে বরকত, শান্তি, এবং সুখের প্রার্থনা করা হয়। বিয়ের সময় ইমাম বা কোনো ধর্মীয় ব্যক্তি বিয়ের চুক্তি সম্পন্ন করার পর সাধারণত একটি বিশেষ দোয়া করেন। 

এই দোয়া নবদম্পতির জন্য আল্লাহর রহমত কামনা করে তাদের জীবন সুন্দর এবং সুখময় করার জন্য করা হয়। বিয়ের পর নবদম্পতির জন্য কল্যাণ ও বরকত কামনা করে এবং তাদের জীবনে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার উদ্দেশ্যে মহানবী (সা.) একটি বিশেষ দোয়া শিখিয়েছেন, যা নিচে উল্লেখ করা হলো:

উচ্চারণ- "আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন খাইরিহা ওয়া খাইরি মা জাবালতাহা আলাইহি, ওয়া আউজু বিকা মিন শাররিহা ওয়া শাররি মা জাবালতাহা আলাইহি।"

বাংলা অর্থ- "হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে তার (স্ত্রীর) কল্যাণ এবং তাকে যে ভালো স্বভাব দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, তার কল্যাণ প্রার্থনা করছি। আর আমি আপনার কাছে তার মন্দ এবং তাকে যে মন্দ স্বভাব দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, তার থেকে আশ্রয় চাইছি।"

হাদিসের ব্যাখ্যা- আমর ইবন শুআইব (রহ.) তার পিতার মাধ্যমে তার দাদা থেকে বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমাদের কেউ যখন বিয়ে করে বা কোনো দাস ক্রয় করে, সে যেন এই দোয়া পড়ে এবং আল্লাহর কাছ থেকে বরকত প্রার্থনা করে।” নবী করিম (সা.) আরও বলেছেন, “যদি কেউ উট ক্রয় করে, সে যেন উটের কুঁজের উপরিভাগ ধরে বরকতের দোয়া পড়ে।” (আবু দাউদ, হাদিস: ২১৬০)।

বিয়ের পর এই দোয়া পাঠ করা নবদম্পতির জীবনে বরকত ও কল্যাণ আনার অন্যতম একটি উপায়। বিয়েতে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে সুসম্পর্ক ও শান্তির জন্য আল্লাহর সাহায্য চাওয়া হয়, এবং আল্লাহ তাদের উভয়ের জীবনে কল্যাণ প্রতিষ্ঠা করেন। দোয়ার মাধ্যমে মন্দ স্বভাব ও অনিষ্ট থেকে রক্ষা পেতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া হয়, যা দাম্পত্য জীবনে যে কোনো সমস্যা দূর করতে সহায়ক।

১০. বিয়ে হওয়ার দোয়া

ইসলামে বিয়ে একটি পবিত্র বন্ধন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একটি মাধ্যম। যারা বিয়ের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং দ্রুত বিয়ে সম্পন্ন করতে চান, তাদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ, তাই আল্লাহর সাহায্য এবং বরকত কামনা করে বিশেষ দোয়া করা যেতে পারে।

আপনি নিচের দোয়া পাঠ করে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে পারেন:
  • আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়ার একটি সাধারণ দোয়া:
    • উচ্চারণ- "রাব্বি ইন্নি লিমা আনযালতা ইলাইয়া মিন খাইরিন ফাকির।"
    • অর্থ- "হে আমার প্রতিপালক! তুমি আমার জন্য যা কল্যাণ নাজিল করেছ, তার জন্য আমি তোমার মুখাপেক্ষী।" (সুরা কাসাস, আয়াত: ২৪)
  • আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল বা ভরসা রাখার জন্যও দোয়া করা যেতে পারে:
    • উচ্চারণ- "হাসবুনাল্লাহু ওয়া নিআমাল ওয়াকিল।"
    • অর্থ- "আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি উত্তম কর্মবিধায়ক।" (সুরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৭৩)
  • কোরআনে বর্ণিত একটি বিশেষ দোয়া রয়েছে, যা বিয়ের উদ্দেশ্যে পড়া যেতে পারে। এই দোয়াটি প্রতিটি নামাজের পর পাঠ করা উত্তম হলেও, যে কোনো সময় ও যে কোনো স্থানে পড়া যাবে।
    • উচ্চারণ- রব্বানা হাব লানা মিন আজওয়াজিনা ওয়া জুররিয়্যাতিনা কুররাতা আ’ইউন, ওয়া জাআলনা লিল মুত্তাকিনা ইমামা।
    • অর্থ- ‘হে আমাদের রব, আমাদের জন্য এমন স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দান করুন, যারা আমাদের চোখের প্রশান্তি হবে। আমাদের আল্লাহভীরুদের জন্য আদর্শ করুন।’ (সূরা: আল-ফুরকান, আয়াত: ৭৪)
    • এই দোয়াটি নিয়মিত পড়লে আল্লাহ তায়ালা উত্তম জীবনসঙ্গী ও পরিবার দানের মাধ্যমে জীবনে শান্তি ও বরকত নাজিল করবেন।
  • এছাড়াও, প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজের পর আল্লাহর কাছে বিয়ের জন্য সহজ এবং কল্যাণকর প্রক্রিয়া কামনা করে নিজের ভাষায় প্রার্থনা করতে পারেন।

১১. বিয়ে নিয়ে ইসলামিক উক্তি

ইসলামে বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং পবিত্র বন্ধন হিসেবে বিবেচিত, যা শুধু স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ভালোবাসা ও সমঝোতার সম্পর্ক স্থাপন করেই শেষ নয়, বরং সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে দায়িত্ব পালন করার একটি মাধ্যমও বটে। বিয়ে সম্পর্কে কোরআন ও হাদিসে অসংখ্য আলোচনা রয়েছে, যা আমাদের এই বন্ধনের গুরুত্ব এবং তা কীভাবে সুসম্পন্ন করা উচিত, সে সম্পর্কে পথপ্রদর্শন করে।

১১.১. বিয়ে নিয়ে কোরআনের আয়াত

১১.১.১. বিয়ে শান্ত ও সান্ত্বনার উৎস

মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের বিয়ে করতে উৎসাহিত করেছেন এবং বিয়ের মাধ্যমে জীবনে যে শান্তি ও সান্ত্বনা পাওয়া যায়, তা কোরআনুল কারীমে উল্লেখ করেছেন।

আল্লাহ বলেন,

“আর তাঁর নিদর্শনসমূহের মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদেরই মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও। এবং তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও রহমত সৃষ্টি করেছেন।” — (সূরা আর-রূম, আয়াত: ২১)

এই আয়াত থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, বিয়ে মানুষকে মানসিক ও আত্মিক প্রশান্তি দান করে। আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে প্রেরিত এই সম্পর্কের মধ্যে রয়েছে ভালোবাসা, দয়া ও সহানুভূতি, যা পারস্পরিক সম্পর্ককে সুদৃঢ় করে এবং জীবনকে সার্থক ও সমৃদ্ধ করে তোলে।

১১.১.২. বিয়ের ক্ষেত্রে আর্থিক স্বাবলম্বিতা ও আল্লাহর প্রতিশ্রুতি

বিয়ের ক্ষেত্রে একজন পুরুষের জন্য আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া অত্যন্ত জরুরি। কারণ, বিয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত খরচ এবং বিয়ের পরবর্তী সংসার জীবনের সব ব্যয়ভার বহন করা মূলত স্বামীর দায়িত্ব। এ কারণেই অনেক পুরুষ, বিয়ের উপযুক্ত বয়স হওয়া সত্ত্বেও, আর্থিক সমস্যার কারণে বিয়ে করতে চান না বা করতে পারেন না। 

এই পরিস্থিতিতে, মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের বিয়ে করতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং সেই সঙ্গে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন:

“তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিয়ে সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণ, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে স্বচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। যারা বিবাহে সমর্থ নয়, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেন।” — (সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩২-৩৩)

এই আয়াতের মাধ্যমে বোঝা যায়, যারা বিয়ের জন্য উপযুক্ত কিন্তু শুধুমাত্র আর্থিক সমস্যার কারণে বিয়ে করতে পারছে না, তাদের জন্য মহান আল্লাহ স্বচ্ছলতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। কারণ, তিনি প্রাচুর্যের মালিক এবং তিনি নিজ অনুগ্রহে তাদের অবস্থা পরিবর্তন করতে সক্ষম। সুতরাং, আর্থিক সমস্যার কারণে বিয়ে করতে দেরি করা উচিত নয়, বরং আল্লাহর ওপর ভরসা করে বিয়ের পদক্ষেপ নিতে হবে।

১১.১.৩. ইসলামে নিষিদ্ধ বিবাহ সম্পর্কসমূহ

ইসলামে বিয়ের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট সম্পর্ক হারাম করা হয়েছে, যা আল-কুরআনে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিকভাবে গাইড করেছেন কার সাথে বিবাহ বৈধ এবং কার সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ।

আল্লাহ বলেন:

“তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতা, তোমাদের কন্যা, তোমাদের বোন, তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, ভ্রাতৃকন্যা, ভগ্নিকন্যা, তোমাদের সে মাতা যারা তোমাদের স্তন্যপান করিয়েছে, তোমাদের দুধ বোন, তোমাদের স্ত্রীদের মাতা, তোমরা যাদের সাথে সহবাস করেছ সে স্ত্রীদের কন্যা যারা তোমাদের লালন-পালনে আছে। যদি তাদের সাথে সহবাস না করে থাক, তবে এ বিবাহে তোমাদের কোন গোনাহ নেই। তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রী এবং দুই বোনকে একত্রে বিবাহ করা; কিন্তু যা অতীত হয়ে গেছে। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাকারী, দয়ালু।”

— (সূরা নিসা, আয়াত: ২৩)

এই আয়াত থেকে স্পষ্টভাবে জানা যায়, পরিবার ও আত্মীয়দের মধ্যে কিছু সম্পর্ক রয়েছে যাদের সাথে বিবাহ করা সম্পূর্ণরূপে হারাম এবং নিষিদ্ধ। ইসলামের এই নির্দেশনা পারিবারিক সম্পর্কের পবিত্রতা রক্ষা এবং সামাজিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

১১.১.৪. মোহর খুশিমনে প্রদান: ইসলামের নির্দেশনা

মোহর হলো স্ত্রীর অধিকার, যা তাকে খুশিমনে প্রদান করতে হবে। যদিও আমাদের সমাজে কখনও কখনও মোহর কেবল কাবিননামায় লেখা থাকে, তবে নগদে আদায় করার প্রবণতা কম দেখা যায়। এটি ইসলামের নির্দেশনার বিপরীত, কারণ মহান আল্লাহ তায়ালা স্পষ্টভাবে বলেছেন যে, স্ত্রীদের মোহর খুশি মনে প্রদান করতে হবে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন:

“আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশিমনে। তারা যদি খুশি হয়ে তা থেকে অংশ ছেড়ে দেয়, তবে তা তোমরা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ কর।” — (সূরা নিসা, আয়াত: ৪)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, মোহর আদায় করা শুধু একটি প্রথা নয়, এটি স্ত্রীর অধিকার এবং স্বামীর জন্য একটি ধর্মীয় দায়িত্ব। স্ত্রী যদি খুশি মনে মোহরের কিছু অংশ মাফ করে দেন, তবে স্বামী তা গ্রহণ করতে পারেন, তবে তা হবে তার সম্পূর্ণ ইচ্ছার ওপর ভিত্তি করে। সুতরাং, বিয়েতে মোহর যথাযথভাবে এবং খুশি মনে আদায় করা উচিত, যা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার ভিত্তি গড়ে তোলে।

১১.১.৫. বিবাহের সংখ্যা ও সমতা রক্ষার নির্দেশনা: ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি"

ইসলামে বিয়ের বিষয়ে মহান আল্লাহ তায়ালা স্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। একজন পুরুষকে একটি বিয়েতে উৎসাহিত করা হয়েছে, তবে তার সামর্থ্য ও যোগ্যতা থাকলে দুটি, তিনটি, কিংবা চারটি পর্যন্ত বিয়ে করার অনুমতি রয়েছে। তবে শর্ত হচ্ছে, সকল স্ত্রীর প্রতি সমতা রক্ষা করতে হবে, যা বাস্তবিকভাবে অত্যন্ত কঠিন। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

“সেসব মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায় সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে একটিই, অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদেরকে; এতেই পক্ষপাতিত্বে জড়িত না হওয়ার অধিকতর সম্ভাবনা।” — (সূরা নিসা, আয়াত: ৩)

এই আয়াতের মাধ্যমে বোঝা যায়, ইসলামে বিবাহের ক্ষেত্রে পুরুষদের জন্য সীমিত সংখ্যক বিয়ের অনুমতি রয়েছে, তবে এর মূল শর্ত হলো সমতা রক্ষা করা। সমতা রক্ষা করা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে একটিই বিয়েতে সীমাবদ্ধ থাকার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। 

১১.২. বিয়ে নিয়ে হাদিস

১১.২.১. ইসলামে বিবাহ ও রাসূল (সা.)-এর সুন্নাত অনুসরণ

হাদিসে বর্ণিত আছে, তিনজন সাহাবি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইবাদতের বিষয়ে জানতে চাইলে তারা নিজেদের ইবাদাতকে কম মনে করল এবং নিজেদের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিল— একজন সারাজীবন রাতভর সালাত পড়বে, অন্যজন সারাজীবন রোজা রাখবে, আর তৃতীয়জন নারীদের সংসর্গ ত্যাগ করবে ও বিয়ে করবে না। রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে বললেন, ‘‘আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি এবং বেশি আনুগত্য করি, তবুও আমি রোজা রাখি, আবার তা ভঙ্গও করি, সালাত পড়ি ও ঘুমাই এবং নারীদের সাথে বিবাহ বন্ধনও করি। যারা আমার সুন্নাত থেকে বিরত থাকবে, তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।’’ — [মুসলিম: ১৪০১]

এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, ইসলামে ইবাদতের পাশাপাশি বিবাহ করা রাসূল (সা.)-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। যে ব্যক্তি সুন্নাতের প্রতি অনীহা প্রদর্শন করে বিয়ে পরিত্যাগ করবে, সে রাসূলের তরীকা থেকে বিচ্ছিন্ন হবে।

১১.২.২. বিয়ের অনুপ্রেরণা ও নিয়মাবলি

ইসলামে বিয়ের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং নারীদের প্রতি সুবিচার নিশ্চিত করার নির্দেশ রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, “তোমরা নারীদের মধ্য হতে নিজেদের পছন্দমত বিয়ে কর।” (আন-নিসা ৪:৩)

হাদিসে উল্লেখ রয়েছে, যুহরী (রহ.) থেকে বর্ণিত যে, উরওয়াহ (রহ.) 'আয়িশাহ (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করেছিলেন যে, যদি কেউ ইয়াতীমদের প্রতি সুবিচার করতে না পারে, তবে তারা কীভাবে বিয়ে করতে পারবে। তখন আল্লাহর বাণী অনুযায়ী, যদি সুবিচার সম্ভব না হয়, তাহলে একাধিক বিয়ের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। 

এখানে বলা হয়েছে, “যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, ইয়াতীমদের প্রতি সুবিচার করতে পারবে না, তবে নারীদের মধ্য হতে নিজেদের পছন্দমত দুই-দুই, তিন-তিন ও চার-চার জনকে বিয়ে কর; কিন্তু যদি তোমরা আশঙ্কা কর যে, তোমরা সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনকে কিংবা তোমাদের অধীনস্থ দাসীকে; এটাই হবে অবিচার না করার কাছাকাছি।” (সূরাহ: আন-নিসা ৩)

'আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, “হে ভাগ্নে! এক ইয়াতীম বালিকা এমন একজন অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে ছিল, যে তার সম্পদ ও রূপের প্রতি আকৃষ্ট ছিল। সে তাকে যথোচিতের চেয়ে কম মাহর দিয়ে বিয়ে করার ইচ্ছা করে। তখন লোকদেরকে নিষেধ করা হলো ঐসব ইয়াতীমদের বিয়ে করার ব্যাপারে। তবে যদি তারা সুবিচার করে ও পূর্ণ মাহর আদায় করে (তাহলে বিয়ে করতে পারবে)। (আধুনিক প্রকাশনী: ৪৬৯১, ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ৪৬৯৪)

মূল কথা হলো, ইসলামে বিয়ের ক্ষেত্রে সুবিচার এবং দেনমোহর আদায় একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সঠিক নিয়ত ও আদেশের ভিত্তিতে বিয়ে করলে এটি পবিত্রতার দিকে নিয়ে যায় এবং সমাজে সঠিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে।

১১.২.৩. বিয়ের গুরুত্ব ও যুবকদের জন্য নির্দেশনা

আবদুল্লাহ্ ইবনু মাস’ঊদ (রাঃ) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে আমরা কিছু যুবক ছিলাম, আর আমাদের কাছে কিছুই ছিল না। এই অবস্থায় আমাদেরকে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “হে যুব সম্প্রদায়! তোমাদের মধ্যে যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখে, তারা যেন বিয়ে করে। কেননা, বিয়ে তার দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থান হিফাযত করে। আর যার বিয়ে করার সামর্থ্য নেই, সে যেন সওম পালন করে। কেননা, সওম তার যৌনতাকে দমন করবে।” (মুসলিম ১৯০৫)

এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং যুবকদের জন্য এটি অপরিহার্য। যারা বিয়ের সামর্থ্য রাখে, তাদের উচিত দ্রুত বিয়ে করা, আর যারা সামর্থ্য রাখে না, তাদের সাওম পালন করা উচিত।

সমাপ্তি

ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ে একটি পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। বিয়ের নিয়মাবলী অনুসরণ করা মুসলিমদের জন্য ফরজ, যা ইসলামী শরিয়তের নীতির উপর ভিত্তি করে গঠিত। বিয়ের মাধ্যমে কেবল দুই জন মানুষের মধ্যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয় না, বরং এটি সামাজিক স্থিতিশীলতা এবং পরিবার গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। 

ইসলাম বিবাহের বিভিন্ন ফরজ ও শর্তাবলী যেমন ইজাব ও কবুল, মোহর নির্ধারণ, প্রাপ্তবয়স্কতা, অভিভাবকের সম্মতি, সাক্ষী ও নিয়তের গুরুত্ব প্রদান করে। সুতরাং, মুসলিম সমাজে বিয়ের নিয়ম পালন করা জরুরি এবং এটি একটি সুখী ও সফল পারিবারিক জীবনের ভিত্তি গড়ে তোলে।

"ইসলামের দৃষ্টিতে বিয়ের নিয়ম, বিয়ে নিয়ে ইসলামিক উক্তি" পোস্ট সম্পর্কিত মন্তব্যের জন্য নিচের কমেন্ট বক্ষে কমেন্ট করতে পারেন।

ধন্যবাদ
সামরিন ইনফো। 🕌💍❤️

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সামরিন ইনফো এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url