বায়োগ্যাস কি, বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরির পদ্ধতি: টেকসই শক্তির আধুনিক সমাধান
বায়োগ্যাস হলো জৈব বর্জ্য থেকে উৎপাদিত একটি পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, যা বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে রান্নার কাজে ব্যবহৃত হয়। বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করে এই শক্তির উৎসকে সহজে ব্যবহার উপযোগী করা যায়, যা পরিবেশ সুরক্ষার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবেও সাশ্রয়ী। এই পোস্টে মূলত বায়োগ্যাস কী, কীভাবে বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি করা যায় এবং এটি টেকসই শক্তির একটি আধুনিক সমাধান হিসেবে কীভাবে কাজ করে তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
চলুন যেনে নেওয়া যাক "বায়োগ্যাস কি, বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরির পদ্ধতি: টেকসই শক্তির আধুনিক সমাধান" সম্পর্কে বিস্তারিত।
১. ভূমিকা
বায়োগ্যাস হলো জৈব বর্জ্য থেকে উৎপাদিত একটি পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, যা জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি মূলত গবাদি পশুর মলমূত্র, খাদ্যবর্জ্য, এবং ফসলের অবশিষ্টাংশ থেকে তৈরি হয়, যা কৃষি ও গ্রামীণ এলাকায় সহজলভ্য। বায়োগ্যাস প্লান্টের মাধ্যমে এই জ্বালানি উৎপাদন করে রান্না, বিদ্যুৎ উৎপাদন, এবং যানবাহনে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব।
টেকসই শক্তির এই আধুনিক সমাধান পরিবেশ দূষণ কমানোর পাশাপাশি বিদ্যুৎ খাতে খরচ সাশ্রয়ে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশে বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় এর ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। বায়োগ্যাস প্রযুক্তির উন্নয়ন দেশের শক্তি খাতের টেকসই উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
২. বায়োগ্যাস কি
বায়োগ্যাস হচ্ছে একটি নবায়নযোগ্য জ্বালানি, যা জৈব পদার্থগুলোর পচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপন্ন হয়। জৈব পদার্থগুলো ব্যাকটেরিয়ার সহায়তায় পচে যাওয়ার ফলে মিথেন (CH₄), কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO₂), হাইড্রোজেন সালফাইড (H₂S), এবং অন্যান্য গ্যাস তৈরি হয়, যা একত্রে বায়োগ্যাস নামে পরিচিত। মূলত কৃষি বর্জ্য, গবাদিপশুর মলমূত্র, পৌর বর্জ্য, উদ্ভিদ উপকরণ, সবুজ বর্জ্য, এবং খাদ্য বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস উৎপাদিত হয়।
২.১. বাংলাদেশে বায়োগ্যাসের ইতিহাস
বাংলাদেশে প্রথম বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট ১৯৭২ সালে নির্মাণ করা হয়। বায়োগ্যাস সেক্টরে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো ইডকল (Infrastructure Development Company Limited)। এছাড়াও, বিসিএসআইআর, GIZ, এবং বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট নির্মাণ ও প্রসারে কাজ করে যাচ্ছে। ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে সর্বমোট ৭৬,৭৭১টি বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট নির্মিত হয়েছে।
২.২. বায়োগ্যাসের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বাংলাদেশ সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ৩১.০৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বায়োমাস এবং বায়োগ্যাস থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। বায়োগ্যাস বাণিজ্যিকভাবে প্রসারিত হলে এটি গৃহস্থালীর প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তবে, বায়োগ্যাস উৎপাদনের পর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে, যা জাতীয় পর্যায়ে গাইডলাইনে উল্লেখ করা হয়েছে।
স্রেডা (Sustainable and Renewable Energy Development Authority) এবং বিদ্যুৎ বিভাগের উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট নির্মাণের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
৩. বায়োমাস ও বায়োগ্যাস কি
৩.১. বায়োমাস
বায়োমাস হলো জৈব পদার্থ যা উদ্ভিদ এবং প্রাণীর বর্জ্য থেকে উৎপন্ন হয়। এটির মধ্যে রয়েছে গাছপালা, প্রাণীর মলমূত্র, খাদ্যবর্জ্য, ফসলের খোসা, খড়, কাঠ, এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান। বায়োমাসকে পুনর্ব্যবহারযোগ্য শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হয় কারণ এটি প্রাকৃতিক উপায়ে মাটিতে ফিরিয়ে দেওয়া যেতে পারে এবং এটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক নয়।
বায়োমাসের প্রধান উৎস হলো সৌরশক্তি, যা উদ্ভিদের বৃদ্ধি এবং ফটোসিন্থেসিস প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জমা হয়। বায়োমাস থেকে আমরা জ্বালানি হিসেবে বায়োগ্যাস তৈরি করতে পারি, যা টেকসই শক্তির অন্যতম আধুনিক সমাধান।
৩.২. বায়োগ্যাস
বায়োগ্যাস হলো বায়োমাসের পচন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন এক ধরনের গ্যাস। এটি মূলত মিথেন (CH4) এবং কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) এর মিশ্রণ। বায়োমাস যেমন গবাদি পশুর মলমূত্র, উদ্ভিদের বর্জ্য, এবং খাদ্যবর্জ্য পচিয়ে বায়োগ্যাস তৈরি করা হয়। এই প্রক্রিয়াটি ‘অ্যানেরোবিক ডাইজেশন’ নামে পরিচিত, যেখানে অক্সিজেন ছাড়াই ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে বায়োমাস পচানো হয়।
বায়োগ্যাস হলো একটি পরিষ্কার এবং পুনর্ব্যবহারযোগ্য জ্বালানি, যা রান্নার কাজে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে এবং যানবাহনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
৪. বায়োগ্যাস এর ব্যবহার
বায়োগ্যাস ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে যানবাহন চালানো পর্যন্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা সম্ভব। নিচে বায়োগ্যাসের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহারগুলির বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
৪.১. রান্নার কাজে
বায়োগ্যাস রান্নার কাজে একটি জনপ্রিয় এবং ব্যবহারিক শক্তির উৎস। বিশেষত গ্রামীণ এলাকায়, যেখানে প্রচুর পরিমাণে জৈব বর্জ্য পাওয়া যায়, সেখানে বায়োগ্যাসকে ঘরের রান্নার চুলার জন্য গ্যাস হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটি প্রাকৃতিক গ্যাসের বিকল্প হিসেবে কাজ করে এবং পরিবেশের জন্য কম ক্ষতিকর।
৪.২. বিদ্যুৎ উৎপাদন
বায়োগ্যাস ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। একটি বায়োগ্যাস প্লান্টে উৎপন্ন গ্যাস একটি জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুতে রূপান্তর করা যায়। এটি বিশেষত গ্রামীণ এবং উন্নয়নশীল এলাকায় একটি সাশ্রয়ী এবং নির্ভরযোগ্য শক্তির উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, যেখানে বিদ্যুতের অভাব রয়েছে।
৪.৩. যানবাহনের জ্বালানি
বায়োগ্যাসকে পরিশোধন করে যানবাহনের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এই জ্বালানিকে বায়োমিথেন বলে, যা প্রাকৃতিক গ্যাসের একটি বিকল্প। বায়োমিথেন দিয়ে গাড়ি, বাস, ট্রাক ইত্যাদি চালানো সম্ভব। এটি একদিকে যেমন পরিবেশের জন্য ভালো, অন্যদিকে তেলের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনে।
৪.৪. সার উৎপাদন
বায়োগ্যাস প্লান্ট থেকে উৎপন্ন বর্জ্যকে জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই সার মাটির উর্বরতা বাড়ায় এবং ফসলের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। এটি রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসেবে কাজ করে, যা পরিবেশবান্ধব এবং খরচে সাশ্রয়ী।
৪.৫. তাপ উৎপাদন
বায়োগ্যাস সরাসরি তাপ উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করা যায়। শিল্প কারখানাগুলিতে যেখানে প্রচুর তাপের প্রয়োজন হয়, বায়োগ্যাসকে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে বয়লারে তাপ তৈরি করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত তাপ শিল্পে ব্যবহৃত হয়ে শক্তি সাশ্রয় করে।
৪.৬. কৃষি কাজে
বায়োগ্যাস প্লান্ট থেকে প্রাপ্ত জৈব সার এবং শক্তি কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। এটি কৃষকদের জন্য সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব উপায়ে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে। কৃষির জন্য প্রয়োজনীয় সার ও শক্তির উৎস হিসেবে বায়োগ্যাস কৃষকদের সহায়তা করছে।
৫. বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরির পদ্ধতি
বায়োগ্যাস হলো একটি পরিবেশবান্ধব জ্বালানি, যা পচনশীল পদার্থ যেমন গোবর, বর্জ্য, ফসলের অবশিষ্টাংশ ইত্যাদি থেকে তৈরি করা যায়। বাংলাদেশে জ্বালানি সংকটের সমাধানে বায়োগ্যাস প্লান্ট একটি কার্যকরী সমাধান হতে পারে। এতে ঘরের রান্না, বিদ্যুৎ উৎপাদন, এবং অন্যান্য জ্বালানি প্রয়োজন মেটানো সম্ভব। নিচে বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরির পদ্ধতি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হলো:
৫.১. প্লান্টের জন্য উপযুক্ত স্থান নির্বাচন
বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের জন্য উপযুক্ত স্থানের নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। প্লান্টটি এমন স্থানে স্থাপন করা উচিত যা বাড়ির কাছাকাছি এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে অবস্থিত। প্লান্টের চারপাশে পর্যাপ্ত জায়গা থাকতে হবে যাতে সেখানে কাঁচামাল মজুদ করা যায়। এছাড়াও, প্লান্টের কাছাকাছি পানি সরবরাহের ব্যবস্থা থাকতে হবে, যাতে পানির প্রয়োজন সহজেই মেটানো যায়।
৫.২. বায়োগ্যাস তৈরির উপাদান প্রস্তুতকরণ
বায়োগ্যাস উৎপাদনের জন্য প্রধান উপাদানগুলো হলো:
- গোবর: গরু, মহিষ ইত্যাদির গোবর বায়োগ্যাস তৈরির প্রধান উৎস। এটি সহজলভ্য এবং পরিবেশবান্ধব উপাদান।
- জৈব বর্জ্য: গৃহস্থালির বর্জ্য যেমন খাবারের অবশিষ্টাংশ, পচনশীল জৈব পদার্থ ইত্যাদি বায়োগ্যাস তৈরিতে ব্যবহার করা যায়।
- ফসলের অবশিষ্টাংশ: ধানের নাড়া, কাঁঠাল পাতা, কলার খোসা ইত্যাদি পচনশীল পদার্থগুলোও বায়োগ্যাস উৎপাদনে কাজে লাগে।
৫.৩. ডাইজেস্টার নির্মাণ ও ইনস্টলেশন
ডাইজেস্টার হলো সেই অংশ যেখানে বায়োগ্যাস উৎপাদনের প্রক্রিয়া ঘটে। ডাইজেস্টার নির্মাণের জন্য নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে হয়:
- একটি গোলাকার কুয়া খনন করতে হবে। এর ব্যাস এবং গভীরতা নির্ধারণ করা হবে প্লান্টের আকারের উপর ভিত্তি করে।
- তলদেশে ইটের বিছানা এবং সিমেন্ট দিয়ে ঢালাই করতে হবে।
- দেয়াল তৈরি করে তা প্লাস্টার করতে হবে, যাতে গ্যাসের নির্গমন রোধ করা যায়।
- একটি গম্বুজ আকৃতির ডোম তৈরি করতে হবে, যেখানে গ্যাস জমা হবে।
- ডাইজেস্টারের মধ্যে ইনলেট পাইপ এবং আউটলেট পাইপ স্থাপন করতে হবে। ইনলেট পাইপের মাধ্যমে কাঁচামাল প্রবেশ করবে, এবং আউটলেট দিয়ে স্লারি (জৈব সার) নির্গত হবে।
৫.৪. গ্যাস সংগ্রহের ব্যবস্থা
ডাইজেস্টারের উপরে একটি গ্যাস বাল্ব বসাতে হবে, যা দিয়ে বায়োগ্যাস সংগ্রহ করা হবে। গ্যাস নির্গমনের জন্য একটি পিভিসি পাইপ ব্যবহার করা যেতে পারে, যা প্লান্ট থেকে রান্নার চুলা, জেনারেটর বা অন্যান্য ব্যবহারস্থলে সরবরাহ করা হবে। গ্যাস বাল্বের ছিদ্র পরীক্ষা করতে হবে যাতে কোনো গ্যাসের লিকেজ না ঘটে।
৬. বায়োগ্যাসের উপকারিতা
- পরিবেশবান্ধব জ্বালানি: বায়োগ্যাস ব্যবহারে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না। এটি পচনশীল পদার্থ থেকে উৎপন্ন হয়, যা সহজেই পুনঃব্যবহারযোগ্য।
- জৈব সার: বায়োগ্যাস প্লান্ট থেকে প্রাপ্ত জৈব সার জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে এবং রাসায়নিক সার ব্যবহারের প্রয়োজন কমিয়ে দেয়।
- জ্বালানি সাশ্রয়: কাঠ, কেরোসিন, কয়লার মতো প্রথাগত জ্বালানির বিকল্প হিসেবে বায়োগ্যাস ব্যবহার করা যায়, যা খরচ সাশ্রয় করে।
- স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা: বায়োগ্যাস ব্যবহারে ধোঁয়া তৈরি হয় না, যা রান্নার সময় শ্বাসকষ্ট বা অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা কমিয়ে দেয়।
৭. বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরির খরচ
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরি একটি লাভজনক এবং টেকসই উদ্যোগ হতে পারে। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায়, যেখানে প্রচুর পরিমাণে গবাদি পশুর মলমূত্র, খাদ্যবর্জ্য এবং ফসলের খোসা পাওয়া যায়, সেখানে বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করলে খরচ অনেকটা কম এবং এর সুবিধা দীর্ঘমেয়াদে বেশি পাওয়া যায়।
বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরির জন্য মূল খরচের ধরন:
৭.১. প্লান্টের আকার
বায়োগ্যাস প্লান্টের খরচ মূলত নির্ভর করে প্লান্টের আকারের ওপর। সাধারণত ২ থেকে ৬ ঘনমিটার আকারের প্লান্ট স্থাপনে খরচ কম হয় এবং এ ধরনের প্লান্ট ব্যক্তিগত বা ছোট পরিবারের জন্য উপযোগী। আর বড় প্লান্ট, যেমন ১০-২৫ ঘনমিটার আকারের বাণিজ্যিক প্লান্ট স্থাপনে খরচ বেশি পড়ে।
৭.২. উপকরণ ও নির্মাণ খরচ
- ইট ও সিমেন্ট: প্লান্টের কাঠামো তৈরি করতে ইট এবং সিমেন্টের প্রয়োজন হয়, যা নির্ভর করে প্লান্টের আকার এবং গঠনশৈলীর ওপর।
- লোহার রড ও পাইপ: বায়োগ্যাসের সরবরাহ লাইন ও নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য লোহার রড এবং পিভিসি পাইপ ব্যবহার করতে হয়।
- জ্বালানি ট্যাঙ্ক: বায়োগ্যাস সংরক্ষণের জন্য একটি ট্যাঙ্কের প্রয়োজন হয় যা প্লাস্টিক বা মেটালের হতে পারে।
- মেশিন ও সরঞ্জাম: বায়োগ্যাস প্রক্রিয়াজাত করতে কিছু প্রয়োজনীয় মেশিন ও সরঞ্জাম দরকার হয়, যেমন মিক্সার বা গ্যাস জেনারেটর।
৭.৩. মজুরি খরচ
- প্লান্ট নির্মাণের জন্য শ্রমিকদের মজুরি একটি বড় অংশের খরচ হতে পারে। দক্ষ শ্রমিকদের নিয়োগ দিলে খরচ বেশি হতে পারে, কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী গুণগতমান বজায় থাকে।
- প্লান্ট পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিয়মিত শ্রমিকের প্রয়োজন হতে পারে, বিশেষত বড় আকারের বাণিজ্যিক প্লান্টে।
৭.৪.প্লান্ট আকার অনুযায়ী আনুমানিক খরচ
- ছোট আকারের প্লান্ট (২-৬ ঘনমিটার): সাধারণত ব্যক্তিগত বা পারিবারিক ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়। এ ধরনের প্লান্ট স্থাপন করতে খরচ হতে পারে প্রায় ৫০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ টাকা।
- মাঝারি আকারের প্লান্ট (৭-১২ ঘনমিটার): গ্রামের কিছু বড় পরিবার বা ছোট ব্যবসার জন্য ব্যবহৃত হয়। এ ধরনের প্লান্ট স্থাপন করতে আনুমানিক খরচ হয় ১,৫০,০০০ থেকে ৩,০০,০০০ টাকা।
- বড় আকারের প্লান্ট (১৩-২৫ ঘনমিটার বা তার বেশি): বড় ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বা শিল্প কারখানার জন্য প্রযোজ্য। এর খরচ ৪,০০,০০০ থেকে ১০,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
৭.৫. সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা
বাংলাদেশ সরকার এবং কিছু এনজিও বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো স্বল্পসুদে ঋণ প্রদান করে থাকে, যা প্লান্ট স্থাপনে খরচ কমাতে সহায়ক হয়। এছাড়া, গ্রামীণ ব্যাংক ও অন্যান্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সহজ কিস্তিতে ঋণ পাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।
৭.৬. বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের খরচ কমানোর উপায়
- স্থানীয় উপকরণের ব্যবহার: প্লান্ট তৈরির উপকরণ যেমন ইট, সিমেন্ট এবং অন্যান্য সামগ্রী স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করলে খরচ কমে যায়।
- সরকারি ভর্তুকি: সরকারের পক্ষ থেকে বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের জন্য বিভিন্ন ভর্তুকি ও আর্থিক প্রণোদনা পাওয়া যায়, যা খরচ কমিয়ে দেয়।
- উচ্চ দক্ষতার শ্রমিক ব্যবহার: দক্ষ শ্রমিকদের নিয়োগ দিলে প্রথমে খরচ কিছুটা বেশি হতে পারে, তবে দীর্ঘমেয়াদে রক্ষণাবেক্ষণের খরচ কমে আসে।
৮. বায়োগ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন পদ্ধতি
বায়োগ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পদ্ধতি বেশ কিছু ধাপে সম্পন্ন হয়। নিচে পদ্ধতিটি সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করা হলো:
৮.১. বর্জ্য সংগ্রহ
প্রথমে গবাদি পশুর মলমূত্র, পোল্ট্রি খামারের বর্জ্য, রান্নার খাদ্যবর্জ্য, ফল ও সবজি খোসা ইত্যাদি সংগ্রহ করা হয়। এই বর্জ্যগুলো মূলত জৈব পদার্থ যা পচনশীল।
৮.২. বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে বর্জ্য সংরক্ষণ
সংগৃহীত বর্জ্যকে বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে নিয়ে গিয়ে এক বিশেষ ধরনের চেম্বারে (আবদ্ধ ট্যাংক বা ডাইজেস্টার) রাখা হয়। এখানে বর্জ্যগুলোকে জলীয় অবস্থায় রাখা হয়, যেখানে কোনো অক্সিজেন প্রবেশ করতে পারে না। এটি একটি বায়ুরোধী ট্যাংক।
৮.৩. অ্যানেরোবিক পচন প্রক্রিয়া
এই ট্যাংকে বর্জ্যগুলো অ্যানেরোবিক ব্যাকটেরিয়ার সাহায্যে পচনশীল হতে থাকে। অক্সিজেনবিহীন এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় "অ্যানেরোবিক ডাইজেশন"। এই প্রক্রিয়ার ফলে বর্জ্য থেকে মিথেন (CH₄), কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO₂) এবং অন্যান্য গ্যাস উৎপন্ন হয়, যা বায়োগ্যাস নামে পরিচিত।
৮.৪. গ্যাস সংগ্রহ
ডাইজেস্টার থেকে উৎপাদিত বায়োগ্যাস একটি আলাদা চেম্বারে জমা হয়। বায়োগ্যাসের প্রধান উপাদান মিথেন, যা খুব দাহ্য এবং জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
৮.৫. বায়োগ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন
জমাকৃত বায়োগ্যাসকে একটি গ্যাস জেনারেটরে পাঠানো হয়, যেখানে এটি জ্বালানো হয়। গ্যাস জ্বালানোর ফলে জেনারেটরের টারবাইন ঘুরতে শুরু করে, যা বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে। এই পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়, যা স্থানীয়ভাবে ব্যবহৃত বা বিদ্যুৎ গ্রিডে সরবরাহ করা যায়।
৮.৬. স্লারি ব্যবহারের সুবিধা
ডাইজেস্টারে বর্জ্য পচন প্রক্রিয়া শেষে যে তরল এবং কঠিন পদার্থ (স্লারি) থেকে যায়, তা জৈব সার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটি মাটির উর্বরতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৯. বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরির প্রতিষ্ঠান
বাংলাদেশে বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন একটি জনপ্রিয় উদ্যোগ হয়ে উঠছে, বিশেষত গ্রামীণ এলাকায় যেখানে গবাদি পশুর মলমূত্র এবং কৃষি বর্জ্যের সহজলভ্যতা রয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই ধরনের প্রকল্পে সহায়তা করে থাকে। এসব প্রতিষ্ঠান বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন, পরিকল্পনা, উপকরণ সরবরাহ, এবং প্রশিক্ষণ প্রদানে বিশেষায়িত। নিচে বাংলাদেশে বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের জন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিবরণ দেওয়া হলো:
৯.১. ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড (IDCOL)
IDCOL হলো বাংলাদেশ সরকারের একটি প্রতিষ্ঠান যা বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনে আর্থিক সহায়তা এবং প্রযুক্তিগত দিকনির্দেশনা প্রদান করে। তারা বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরির জন্য সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করে থাকে এবং দেশজুড়ে হাজার হাজার বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনে ভূমিকা রেখেছে।
- সেবা: বায়োগ্যাস প্লান্টের জন্য ঋণ, প্রযুক্তিগত সহায়তা, প্রশিক্ষণ।
- যোগাযোগ: IDCOL ওয়েবসাইট
৯.২. গ্রামীণ শক্তি (Grameen Shakti)
গ্রামীণ শক্তি বাংলাদেশের অন্যতম উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান যারা নবায়নযোগ্য শক্তি এবং বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনে কাজ করে। তারা সোলার পাওয়ার ছাড়াও বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করে থাকে, যা মূলত গ্রামীণ এলাকায় টেকসই শক্তি সরবরাহের জন্য কাজে লাগানো হয়।
- সেবা: ছোট থেকে মাঝারি আকারের বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ এবং পরিচালনা সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ।
- যোগাযোগ: Grameen Shakti ওয়েবসাইট
৯.৩. ব্র্যাক (BRAC)
ব্র্যাক বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম এনজিও, যারা বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বিশেষত গ্রামীণ দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য তারা বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনে সহায়তা করে থাকে। তারা সহজ কিস্তিতে ঋণ প্রদান এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়।
- সেবা: ঋণ সুবিধা, প্রযুক্তিগত সহায়তা, এবং স্থানীয় জনগণের প্রশিক্ষণ।
- যোগাযোগ: BRAC ওয়েবসাইট
৯.৪. নির্বাহী প্রকৌশল অধিদপ্তর (Department of Environment)
বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ অধিদপ্তর নবায়নযোগ্য শক্তির প্রচার ও প্রসারে কাজ করছে। তারা বিভিন্ন ধরনের বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনে অনুমোদন এবং পরিকল্পনার দিকনির্দেশনা দিয়ে থাকে। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় তারা বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের জন্য সহায়তা করে।
- সেবা: সরকারি অনুমোদন, টেকসই শক্তি প্রকল্পে অর্থায়ন এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা।
- যোগাযোগ: DOE ওয়েবসাইট
৯.৫. প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং ও কনস্ট্রাকশন ফার্ম
বাংলাদেশে অনেক প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং ও কনস্ট্রাকশন প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের কাজ করে থাকে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ছোট থেকে বড় আকারের প্লান্ট তৈরি করে থাকে। কিছু উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান হল:
- EnergyPac
- Technohaven Company Ltd.
- Green Energy BD
৯.৬. ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (UIU) এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠানও বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনে গবেষণা এবং উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে। UIU Renewable Energy Research Centre এ ধরনের একাধিক গবেষণা প্রকল্পে জড়িত।
৯.৭. নেদারল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (SNV)
SNV হলো একটি আন্তর্জাতিক এনজিও যা বাংলাদেশে বায়োগ্যাস উন্নয়ন প্রকল্পে কাজ করে। তারা বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে। এছাড়াও, এই সংস্থা পরিবেশবান্ধব শক্তি প্রচারে সচেতনতা সৃষ্টির কাজ করে।
- সেবা: প্রশিক্ষণ, বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন, এবং টেকসই ব্যবস্থাপনা।
- যোগাযোগ: SNV ওয়েবসাইট
১০. বাংলাদেশে বায়োগ্যাস
বায়োগ্যাস হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে পচনশীল বর্জ্য (যেমন পোল্ট্রি খামারের মল-মূত্র, গবাদি পশুর বর্জ্য, পচনশীল খাদ্যবস্তু) থেকে মিথেন গ্যাস তৈরি হয়। এই মিথেন গ্যাস বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে বর্জ্যকে এক প্রকার মেশিনে জমা দিয়ে তা থেকে গ্যাস উৎপাদন করা হয়। উৎপাদিত গ্যাস জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুতে রূপান্তরিত করা যায়।
১০.১. বাংলাদেশে বায়োগ্যাসের সম্ভাবনা
বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্প এবং কৃষি খাত বায়োগ্যাস উৎপাদনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে বিবেচিত হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের মতে, দেশের প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার পোল্ট্রি খামারকে বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের আওতায় এনে প্রায় ২০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব।
পোল্ট্রি খামারের বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপন করে কেবল বিদ্যুৎ উৎপাদনই নয়, গ্রামীণ কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টির সুযোগ রয়েছে।
১০.২. যশোর পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প
যশোর পৌরসভা বর্জ্য থেকে সার, বায়োগ্যাস এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি সফল উদাহরণ। ২০১৯ সালের আগস্টে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রকল্প শুরু হয়। এই প্রকল্পে প্রতিদিন প্রায় ৩৮ টন বর্জ্য সংগ্রহ করা হয় এবং তা থেকে কম্পোস্ট সার, বায়োগ্যাস এবং বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়।
বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে বর্জ্য থেকে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় এবং তা পুরো প্ল্যান্টেই ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে যশোরের এই প্রকল্পে ২০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে।
১০.৩. বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের বর্তমান অবস্থা
বাংলাদেশে বায়োগ্যাসের প্রথম প্ল্যান্ট চালু হয় ১৯৭২ সালে, কিন্তু এর পরবর্তী ৫০ বছরে এ প্রযুক্তি প্রত্যাশা অনুযায়ী ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমানে দেশে প্রায় এক লাখ বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট রয়েছে, যেখানে নেপালের মতো ছোট দেশেও এই সংখ্যা দুই লাখের কাছাকাছি।
টেকসই ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (স্রেডা) তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৪০ লাখ বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপনের সম্ভাবনা থাকলেও কেবল আড়াই শতাংশ সম্ভাবনাই কাজে লাগানো হয়েছে।
১০.৪. উৎপাদিত বিদ্যুৎ ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরাসরি ব্যবহারের জন্য স্থানীয়ভাবে বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস সরবরাহের পরিকল্পনাও রয়েছে। ভবিষ্যতে এ ধরনের উদ্যোগগুলোকে আরো সম্প্রসারিত করলে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ চাহিদার একটি বড় অংশ বায়োগ্যাস থেকে মেটানো সম্ভব হবে।
তবে স্রেডার তথ্য অনুযায়ী, ১৫ জুলাই ২০২৩ পর্যন্ত, দেশে বায়োমাস থেকে মাত্র শূন্য দশমিক ৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়, যা পরিকল্পিত লক্ষ্যমাত্রার অনেক কম।
১০.৫. চ্যালেঞ্জ ও সমাধান
বায়োগ্যাস খাতে যে প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো প্রযুক্তিগত ঘাটতি, জনসচেতনতার অভাব, এবং নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের জটিলতা। অনেকেই সিলিন্ডার গ্যাস বা কাঠখড়ের মতো সহজ জ্বালানি বিকল্পে ঝুঁকে পড়েন। প্ল্যান্ট স্থাপনের পর রক্ষণাবেক্ষণ না করার ফলে অনেক প্ল্যান্ট অচল হয়ে যায়।
বায়োগ্যাস ও বায়োমাস খাতের প্রসারে সরকারের আরও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। পরিবেশ সুরক্ষা ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহারের প্রসার ঘটাতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে এবং সহজ শর্তে ঋণ প্রদান ও ভর্তুকির ব্যবস্থা বাড়াতে হবে।
১১. FAQ (Frequently Asked Questions)
১১.১. ১ টন বায়োমাসে কত বায়োগ্যাস উৎপন্ন হয়?
১ টন বায়োমাস থেকে প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ ঘনমিটার বায়োগ্যাস উৎপন্ন হতে পারে, তবে এটি বায়োমাসের ধরণ ও গুণমানের ওপর নির্ভর করে।
১১.২. গোবর গ্যাস পাওয়া যায় কি থেকে?
গোবর গ্যাস (বায়োগ্যাস) মূলত গরু, মহিষ বা অন্যান্য প্রাণীর গোবর থেকে উৎপন্ন হয়। এছাড়াও অন্যান্য অর্গানিক বর্জ্য যেমন খাদ্য বর্জ্য, উদ্ভিদের অংশ থেকেও বায়োগ্যাস উৎপাদন করা যায়।
১১.৩. বায়োগ্যাস কি এবং কিভাবে দহন হয়?
বায়োগ্যাস হল এক ধরনের প্রাকৃতিক গ্যাস যা অ্যানেরোবিক পচনের মাধ্যমে অর্গানিক পদার্থ থেকে উৎপন্ন হয়। এতে প্রধান উপাদান হিসেবে মিথেন (CH₄) এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড (CO₂) থাকে। বায়োগ্যাস দাহ্য, অর্থাৎ এটি অক্সিজেনের সাথে বিক্রিয়া করে জ্বলে ওঠে এবং তাপ ও শক্তি উৎপন্ন করে।
১১.৪. বায়োগ্যাস কি নবায়নযোগ্য?
হ্যাঁ, বায়োগ্যাস নবায়নযোগ্য জ্বালানি হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি জীবাশ্ম জ্বালানির পরিবর্তে ব্যবহার করা যায়, এবং পরিবেশে কম ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে।
১১.৫. বর্জ্য থেকে কিভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব?
বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে বর্জ্যকে অ্যানেরোবিকভাবে পচিয়ে গ্যাস উৎপন্ন করা হয়। এই গ্যাসকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ইঞ্জিন বা টারবাইন চালানোর কাজে ব্যবহার করা হয়, যা বিদ্যুৎ উৎপাদন করে।
১২. সমাপ্তি
বায়োগ্যাস হলো একটি টেকসই শক্তির আধুনিক সমাধান, যা পরিবেশবান্ধব এবং অর্থনৈতিকভাবে সাশ্রয়ী। বায়োমাস থেকে উৎপাদিত এই শক্তি গ্রামীণ এবং শহুরে উভয় এলাকায় শক্তির চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে কৃষি বর্জ্য ও গবাদি পশুর মলমূত্রকে পুনঃব্যবহার করে পরিবেশ সংরক্ষণ এবং জ্বালানি খরচ কমানো সম্ভব।
এর ফলে জীবাশ্ম জ্বালানির উপর নির্ভরতা কমে আসে এবং গ্রামীণ অর্থনীতিতে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। সঠিক পরিকল্পনা, প্রযুক্তিগত সহায়তা, এবং সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশে বায়োগ্যাস প্লান্টের ব্যবহার আরও সম্প্রসারিত করা সম্ভব, যা দেশের পরিবেশ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক হবে।
"বায়োগ্যাস কি, বায়োগ্যাস প্লান্ট তৈরির পদ্ধতি: টেকসই শক্তির আধুনিক সমাধান" পোস্ট সম্পর্কিত মন্তব্যের জন্য নিচের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন।
ধন্যবাদ
সামরিন ইনফো।
সামরিন ইনফো এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url