একটি বর্ষনমুখর সন্ধ্যা, প্রবন্ধ রচনা ২০ পয়েন্ট

বর্ষনমুখর সন্ধ্যা আমাদের জীবনের এক অনন্য অভিজ্ঞতা এনে দেয়। এই সময়টায় প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা আরও গভীর হয়ে ওঠে। বৃষ্টির শব্দ, মেঘের গর্জন, সবুজ প্রকৃতি—সব মিলিয়ে বর্ষার সন্ধ্যা আমাদের মনকে প্রশান্তি ও সজীবতার স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। "একটি বর্ষনমুখর সন্ধ্যা, প্রবন্ধ রচনা ২০ পয়েন্ট" পোস্টে একটি বর্ষনমুখর সন্ধ্যার অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রবন্ধ রচনা করা হয়েছে।

চলুন যেনে নেওয়া যাক "একটি বর্ষনমুখর সন্ধ্যা" এর অভিজ্ঞতা কিরকম ছিল।

ভূমিকা

বর্ষাকাল আমাদের জীবনে এক বিশেষ সময় নিয়ে আসে, যা আমাদের মন ও মস্তিষ্কে একটি স্বতন্ত্র অনুভূতি জাগায়। বিশেষ করে বর্ষনমুখর সন্ধ্যা, যখন চারিদিকে বৃষ্টির শব্দ আর মেঘের গর্জন শোনা যায়, তখন সেই মুহূর্তগুলো হয়ে ওঠে আরও আকর্ষণীয় ও মনোমুগ্ধকর। এই সময়টায় প্রকৃতি তার নিজস্ব সুরে আমাদের মনকে আন্দোলিত করে। 
একটি বর্ষনমুখর সন্ধ্যা, প্রবন্ধ রচনা ২০ পয়েন্ট
বর্ষার সন্ধ্যার এই অনন্য রূপ এবং তার প্রভাব আমাদের দৈনন্দিন জীবনের ক্লান্তি দূর করে নিয়ে আসে প্রশান্তি। এই প্রবন্ধে আমরা বর্ষনমুখর সন্ধ্যার সেই সুন্দর মুহূর্তগুলো নিয়ে আলোচনা করব, যা আমাদের জীবনের এক অনন্য অভিজ্ঞতা প্রদান করে।

বর্ষাকালের চিত্র

বর্ষাকাল হল প্রকৃতির এক অনন্য সৃষ্টিকর্ম, যা তার বিভিন্ন রূপ, রঙ এবং সুরের মাধ্যমে আমাদের সামনে উদ্ভাসিত হয়। বর্ষার আগমনে প্রকৃতি যেন নতুন করে জীবন ফিরে পায়। যখন আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায়, তখন মনে হয় পুরো আকাশ যেন বৃষ্টির প্রতীক্ষায় অধীর হয়ে আছে।

গ্রীষ্মের তীব্র তাপদাহ শেষে যখন প্রথম বৃষ্টি নামে, তখন মাটির ভেজা গন্ধে প্রকৃতি তার নতুনত্ব প্রকাশ করে। গাছপালা, ফুল, ফসল সব কিছুই যেন বৃষ্টির স্পর্শে আরও সতেজ ও সবুজ হয়ে ওঠে। পুকুর, নদী, হ্রদ, সব জায়গায় জলপূর্ণ হয়ে ওঠে। গ্রামের মেঠো পথগুলো বৃষ্টির পানিতে কাদা হয়ে যায়, আর শহরের রাস্তাগুলোতে ছোট ছোট পানির ধারা গড়িয়ে পড়ে।
একটি বর্ষনমুখর সন্ধ্যা, প্রবন্ধ রচনা ২০ পয়েন্ট
বর্ষার সময় আকাশে বিদ্যুতের ঝলকানি আর বজ্রপাতের শব্দ পরিবেশকে আরও রহস্যময় করে তোলে। মেঘের গর্জন আর বৃষ্টির মৃদু সুর যেন এক সাথে মিলে প্রকৃতির এক অদ্ভুত সুর তৈরি করে। এই সময়টা ফসলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ বৃষ্টির পানিতে জমি সেচ হয়ে ওঠে এবং চাষাবাদ সহজ হয়।

বর্ষাকাল মানেই কদমফুলের সৌরভে ভরে ওঠা সকাল, বৃষ্টির জলভর্তি ধানক্ষেত, আর কিশোরদের কাদা মাখা আনন্দময় খেলা। বর্ষার দিনে কাঁচা আমের টক ঝোল খাওয়া আর পাটিসাপটা পিঠা বানানোর সেই আনন্দময় মুহূর্তগুলো আমাদের মনকে নস্টালজিক করে তোলে।

বর্ষার সময় নদীর ধারে বসে বৃষ্টি দেখা, ঘরের জানালা দিয়ে বৃষ্টির ধারা উপভোগ করা কিংবা খোলা আকাশের নিচে বৃষ্টিতে ভেজার আনন্দই আলাদা। বর্ষার দিনগুলোতে প্রকৃতি যেন আমাদের মাঝে এক ধরনের প্রশান্তি ও সজীবতার বার্তা নিয়ে আসে।

এইভাবে বর্ষাকাল আমাদের জীবনে এক অপূর্ব সৌন্দর্য আর অনুভূতির রঙ নিয়ে আসে, যা আমাদের মন ও মস্তিষ্ককে সজীব ও প্রাণবন্ত করে তোলে।

কবিদের দৃষ্টিতে বর্ষনমুখর সন্ধ্যা

বর্ষনমুখর সন্ধ্যা কবিদের জন্য এক অসীম প্রেরণার উৎস। বৃষ্টি, মেঘ, এবং প্রকৃতির অনন্য রূপ কবিদের মনে বিভিন্ন অনুভূতি জাগায়, যা তারা তাদের কবিতার মাধ্যমে প্রকাশ করেন। বৃষ্টির মৃদু শব্দ, মেঘের গর্জন এবং প্রকৃতির সবুজ শোভা কবিদের কল্পনাকে সমৃদ্ধ করে। বর্ষার সন্ধ্যার নৈসর্গিক দৃশ্য কবিতায় এক অদ্ভুত সৌন্দর্য এবং গভীরতা নিয়ে আসে।
একটি বর্ষনমুখর সন্ধ্যা, প্রবন্ধ রচনা ২০ পয়েন্ট_কবিদের দৃষ্টিতে বর্ষনমুখর সন্ধ্যা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, যিনি প্রকৃতির কবি হিসেবে পরিচিত, বর্ষার সন্ধ্যাকে তাঁর কবিতায় অসাধারণভাবে তুলে ধরেছেন। তাঁর "বর্ষা" কবিতায় তিনি লিখেছেন:

"আজি ঝরঝর মুখর বাদল-দিনে,
জীবনের কথা ভাবি বসে একা।
জল পড়ে, পাতা নড়ে, মন উদাস করে,
ওগো বন্ধু, আজি ভীষণ মনের তৃষ্ণা।
দূর বিজনে, শুনি যেন অশান্ত বাতাসে
তোমার বাণী ঝরিয়া আসে, ওগো বন্ধু!"

জীবনানন্দ দাশ

জীবনানন্দ দাশ, বাংলার আরেক প্রখ্যাত কবি, তাঁর কবিতায় বর্ষার সন্ধ্যার রূপটি সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। তাঁর "বনলতা সেন" কবিতায় বৃষ্টির রাতে গ্রামবাংলার শান্ত সুন্দর দৃশ্যাবলী তুলে ধরেছেন:
"চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য;
অন্ধকারে ঝরে পড়ে অবিরাম বর্ষা,
নিমগাছের নিচে সে একবার এসে বসেছিল;
বলেছিল, ‘সব পাখি ঘরে আসে – সব নদী – ফুরায় এ-জীবনের সব লেনদেন।"

সুকান্ত ভট্টাচার্য

সুকান্ত ভট্টাচার্য বর্ষার সন্ধ্যার মধ্যে মানুষের দুঃখ-কষ্ট এবং জীবন সংগ্রামের চিত্র তুলে ধরেছেন। তাঁর "ছাড়পত্র" কবিতায় তিনি লিখেছেন:
"মর্দন ক’রে মুক্ত করো,
মেহনতি মানুষ মুক্ত হোক
কায়ের জোয়াল ভেঙে ফেলো;
স্বাধীনতার বল আনো,
এই বর্ষনমুখর সন্ধ্যায়;
বৃষ্টির জল ধুয়ে যাক সব অন্ধকার।"

বর্ষনমুখর সন্ধ্যা কবিদের জন্য প্রকৃতির সঙ্গে একান্ত মিলনের সময়। এই সময়ে তারা প্রকৃতির সৌন্দর্য, গভীরতা এবং রহস্যময়তা অনুভব করেন, যা তাদের কবিতায় ফুটে ওঠে। বর্ষার সন্ধ্যা তাদের কল্পনা এবং অনুভূতিকে শাণিত করে, যা তারা তাদের কবিতার মাধ্যমে পাঠকদের সামনে উপস্থাপন করেন।

একটি বর্ষনমুখর সন্ধ্যা

বর্ষার দিনে সন্ধ্যাটা সবসময়ই একটা আলাদা মায়া নিয়ে আসে। ঘর থেকে বাইরে তাকালে দেখাই যায়, ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়ছে, আকাশে মেঘের গর্জন, চারপাশে এক ধরনের শীতল বাতাস। বর্ষার সন্ধ্যাগুলো যেন প্রকৃতির এক সজীবতা এনে দেয়। এই সময়টা যখন প্রকৃতি তার সমস্ত সুর ছন্দে আমাদের মনকে মোহিত করে রাখে, তখন মানুষের মনে যেন এক অদ্ভুত প্রশান্তি নেমে আসে।

আমি একজন কর্মঠ মানুষ। দিনের বেশিরভাগ সময়টাই কাজের পেছনে ব্যয় হয়। কিন্তু আজকের এই বর্ষনমুখর সন্ধ্যায়, বৃষ্টির কারণে বাইরে বের হতে পারিনি। এ কারণে সন্ধ্যাটিকে ঘরের ভিতরে থেকেই উপভোগ করতে হয়েছে। প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করার সুযোগ পেয়ে আমি মুগ্ধ হয়েছি। একে একে কতগুলো অভিজ্ঞতা আমাকে স্পর্শ করেছে, তারই বিবরণ দিতে চাই।

বৃষ্টির মৃদু শব্দে আমার মন যেন শান্তির স্রোতে ভাসতে শুরু করল। জানালার পাশে বসে, গরম চা'র কাপ হাতে, বৃষ্টির ধারা উপভোগ করতে লাগলাম। বৃষ্টির শব্দে এক ধরনের সুর ছিল, যা আমাকে প্রকৃতির সঙ্গে মিলিয়ে দিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই সুরে আমার মন মেতে উঠেছে।

আর অবশ্যই এই বৃষ্টির সুরের সাথে সঙ্গীত মানেই রবীন্দ্রসঙ্গীত। প্রতিটি গানই যেন বৃষ্টির সুরের সাথে মিলে এক অপূর্ব অনুভূতি দিচ্ছিল। সঙ্গীতের সুরে মন যেন আরও প্রশান্তি পেতে শুরু করল। গান শুনতে শুনতে মনে হলো, প্রকৃতি তার সুর দিয়ে আমার মনের সব ক্লান্তি দূর করে দিচ্ছে।
একটি বর্ষনমুখর সন্ধ্যা, প্রবন্ধ রচনা ২০ পয়েন্ট_02

অবশেষে অনেকদিন পর, কবিতা লেখার জন্য কলম ধরলাম। বৃষ্টির সুর আর মেঘের গর্জন আমাকে নতুন কবিতা লেখার অনুপ্রেরণা দিল। প্রকৃতির এই অনন্য রূপ কবিতায় ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করলাম। শব্দের মধ্যে প্রকৃতির সৌন্দর্য্য এবং অনুভূতিগুলোকে বন্দী করার চেষ্টা করলাম। কবিতার প্রতিটি পঙক্তি যেন বৃষ্টির ফোঁটার মতো মনের আকাশে ঝরে পড়ল।

কবিতা লিখতে লিখতেই অতীতের স্মৃতিগুলো আবার আমাকে গভীরভাবে স্পর্শ করছিল। ছোটবেলায় মায়ের কোলে বসে বৃষ্টির দিনে গল্প শোনা, দাদীর হাতে বানানো পিঠা খাওয়া, নানার সান্নিধ্যে বৃষ্টিতে ভেজার সেই দিনগুলো মনে পড়ে গেল।

প্রিয়জনদের হারিয়ে যাওয়ার কষ্টটা আরও বেশি করে অনুভব করলাম। মা-বাবা, দাদী-নানা-নানী—সবাই এখন আর এই পৃথিবীতে নেই। তাদের স্মৃতিগুলোই আমার কাছে আজকের এই সন্ধ্যায় সান্ত্বনার মতন।

বৃষ্টির রাতে আমি কিছু পুরনো চিঠি আর ছবি বের করে দেখলাম। চিঠির প্রতিটি শব্দ, ছবির প্রতিটি মুখ আমার মনে স্মৃতির ঢেউ তুলে দিল। এই মুহূর্তগুলোতে আমি যেন সময়ের স্রোতে ভেসে গেলাম। প্রিয়জনদের সঙ্গে কাটানো সেই মুহূর্তগুলো মনে পড়তে লাগল।

অতএব, বর্ষনমুখর সন্ধ্যায় আমি প্রকৃতির সৌন্দর্য্য, কবিতা, গান শোনার পাশা পাশি কিছু উদাসীন সময় উপভোগ করেছি বলা যায়। এই সন্ধ্যাটি আমার জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা হয়ে থাকল। বর্ষার এই সময়টা যেন প্রকৃতির কাছ থেকে পাওয়া এক উপহার, যা আমাদের জীবনের প্রতিদিনের ক্লান্তি দূর করে নিয়ে আসে প্রশান্তি।

উপসংহার

বর্ষার সন্ধ্যায় একটা ব্যাপার খুব সুন্দরভাবে উপলব্ধি করা যায়, তা হল প্রকৃতির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক। প্রকৃতির এই রূপটা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, আমরা প্রকৃতিরই অংশ। এই সময়ে আমরা প্রকৃতির সান্নিধ্যে এসে আমাদের মনকে নতুন করে সজীব করতে পারি।

"একটি বর্ষনমুখর সন্ধ্যা, প্রবন্ধ রচনা ২০ পয়েন্ট" পোস্ট সম্পর্কিত মন্তব্যের জন্য নিচের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন।

ধন্যবাদ
সামরিন ইনফো। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সামরিন ইনফো এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url